Amrut farming – পেয়ারা চাষ কিভাবে করবেন, কি কি প্রয়োজন, জলসেচ এবং সার ও কীটনাশক কিরকম প্রয়োজন , বিক্রির পদ্ধতি সমস্ত জানুন।

পেয়ারা একটি অতি প্রয়োজনীয় এবং সুস্বাদু ফল। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলের কাছেই এই ফলটি সকলেই পছন্দ করে এবং খেতে ভালোবাসে। আপনারা যখন বাজারে যান বা ছোট বড় কোন শহরে যান দেখবেন রাস্তার ধারে বা ফলের বাজারের সামনে বা যেকোনো স্ট্যান্ডের সাইডে পেয়ারাকে নিয়ে বসে থাকে বিক্রি করার জন্য।

তাদের কাছে এমন ধরনের ডাসা ডাসা পেয়ারা পাওয়া যায় যা দেখলেই খেতে মন যায়। তাছাড়া এক একটি পেয়ারা এত বড় বড় যে দেখলেই মনে হবে এখনো পেয়ারা নয় যেন অন্য কোন ফল। কিন্তু আসলে ওটি একটি পেয়ারায়। ওই ধরনের পেয়ারা আপনি এক কামড় নিলেই রসে আপনার মুখ ভরে যাবে।

তাছাড়া পেয়ারাকে কেজি হিসেবেও বিক্রি করা যায় , আবার সেটিকে চার থেকে ছয় ফালি করে সেটিতে লবণ বা বিটনুন দিয়েও বিক্রি করা যায়। এছাড়া পেয়ার কি কুচু কুচু করে কেটে সেটিতে বিভিন্ন ধরনের মসলা ও সস দিয়ে মসলা পেয়ারা বিক্রি করা যায়। এই ধরনের মসলা পেয়ারা ১০০ গ্রাম কমপক্ষে কুড়ি থেকে ত্রিশ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

তাই পেয়ারা নানান ভাবে মানুষের উপকারিতা করে থাকে। সেই কারণে পেয়ারার চাহিদা সারা বছরই থেকে থাকে। তাই আপনি যেকোনো প্রজাতির পেয়ারার চাষ ( amrut farming ) করেন না কেন, তা থেকে আপনি নানান ভাবে লাভ পেয়ে থাকবেন। সে কেজি হিসেবে গোটা পেয়ারা বিক্রি করে অথবা কেটে বিক্রি করে অথবা মসলা পেয়ারা তৈরি করে বিক্রির মাধ্যমে। তো আপনি যদি চান যে পেয়ারার চাষ করবেন তাহলে এই পোস্টটি আপনাদের জন্য। এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন পেয়ারা চাষের সম্পূর্ণ পদ্ধতি সম্পর্কে। এবং কিভাবে পেয়ারার মার্কেটিং করবেন সমস্ত কিছু তথ্য জানতে পারবেন।

👉পেয়ারার জাত

পেয়ারা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন পেয়ারার বাইরে সবুজ কিন্তু ভেতর সাদা , আবার বাইরে সবুজ ভেতরে লাল, তাছাড়া বাইরে হালকা লালচে ধরনের বেদানা রঙের এবং ভেতরে লাল, এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের রয়েছে যেমন ছোট পেয়ারা বা বড় পেয়ারা, বনা পেয়ারা ইত্যাদি। তবে আপনাকে ওই সমস্ত পেয়ারার জাতি চাষ করতে হবে, সেগুলি খুব বড় ধরনের এবং ডাসা ডাসা রস যুক্ত হয়ে থাকে। তবে মাঝারি ধারণের ডাসালু রস যুক্ত পেয়ারারও বিশেষ চাহিদা রয়েছে বাজারে।

👉পেয়ারার বীজ

পেয়ারার বীজ চাইলে আপনারা নিজেরা বাড়িতে থেকেও তৈরি করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে ভালো মানের পাকা পেয়ারা বাজার থেকে কিনে আনতে হবে। ওই পেয়ারাটিকে কেটে ভেতরের বীজ যুক্ত সংস্কৃতি বার করে নিতে হবে, এরপর সেটিকে রোদে শুকানোর জন্য রেখে দিতে হবে। যখন শ্বাস যুক্ত বিষ গুলি একেবারে শুকিয়ে কাঠের মত হয়ে যাবে তখন সেগুলিকে হাতে করে মোলসিয়ে বীজগুলোকে শুকনো সাস থেকে ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপর সেগুলিকে যে কোন জিনিস দিয়ে চেলে নিতে হবে অথবা পাছড়িয়ে নিতে হবে। যাতে করে বীজগুলি মোটামুটি আলাদা হয়ে যায়। আর যদি আলাদা নাও করেন তাও কোন সমস্যা নাই। শুকনোর পর শুধুমাত্র সেগুলিকে হাতে করে মলসিয়ে নিবেন। তাহলেই আপনার চারা জন্য বীজ রেডি হয়ে যাবে।

তবে আমি আপনাদেরকে রিকমেন্ড করব না যে বাজার থেকে পেয়ারা কিনে নিয়েছে সেই পেয়ারার বীজ তৈরি করুন। কারণ ওই সমস্ত পেয়ারার বেশিরভাগ গুলোই পাকতে না দিয়ে সেগুলিকে পেড়ে নিয়েসে বিক্রি করে। এবং যখন কাঁচা অবস্থায় পিয়ারাগুলোকে পারে তখন তার ভেতরে থাকা বীজগুলোও পরিপুষ্ট ঠিকমতো হয় না। ফলে ওই পেয়ারাগুলো থেকে বীজ তৈরি করে চাষ করলে হয়তো ফলন ভালো নাও হতে পারে।

তাই আমি আপনাদেরকে রিকমেন্ড করব, আপনারা ভালো বড় বীজ দোকানে যাবেন, সেখানে গিয়ে উন্নত মানের পেয়ারার বীজ কিনে নিবেন। আবার অনেক হাইব্রিড বিজও পাওয়া যায়। হাইব্রিড বীজ কিনলে আপনার সুবিধা হবে, কেননা এতে আপনি ফলন ভালো পাবেন এবং বেশি পরিমাণে ফলন পাবেন। তাই আপনার লাভও বেশি হবে সেগুলিকে বিক্রি করার পর।

👉 পেয়ারার চারা তৈরি

প্রথমে আপনাকে যেই জায়গায় চারা গাছের জন্য বীজ ফেলা হবে সেই জায়গাটিকে কোদাল দিয়ে ভালো করে মাটিটিকে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এরপর পেয়ারার বীজগুলিকে তার ওপরে ছড়িয়ে দিতে হবে। ছড়ানোর পর তার ওপরে হালকা মাটির আস্তরণ ছড়িয়ে দিতে হবে এবং হালকা হালকা করে জলের ছিটা দিতে হবে।

বীজ ফেলার কিছুদিন পরে দেখবেন বীজ থেকে চারা অঙ্কুরোদগম হয়ে বেরিয়ে আসছে। এরপর থেকে প্রত্যেকদিন সকালবেলা হালকা হালকা করে জলের ছিটা দিতে থাকবেন যাতে মাটিটা হালকা ভেজা থাকে। তারপর চারা গাছগুলি যখন মোটামুটি হাফ ফুট বা এক চাকরের মত হয়ে যাবে বলে মনে হবে তখন সেই চারা কাজগুলি আপনার লাগানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।

👉 পেয়ারা চারা লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত

পেয়ারা চাষের ( guava farming )জন্য প্রথমে আপনাকে জমিতে জলপাইয়ে নিতে হবে। আপনারা চাইলে জমি নিতে জল পালানোর পূর্বে গোবর অথবা হালকা পরিমাণে ইউরিয়া সার ছড়াতে পারেন । এরপর জমির জল যখন একেবারে টেনে গিয়ে মাটিতে কদাল মারলে যেন মাটিগুলো গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে এমন মনে হবে সেই সময় আপনাকে চারা গাছগুলিকে লাগানোর জন্য রো তৈরি করতে হবে। রো- গুলি মোটামুটি যেন আপনার এক চাকরের মতো উঁচু থাকে ।

👉 পেয়ারা চারা লাগানোর পদ্ধতি

জমিনেতে রো তৈরি করে নেয়ার পর, সেই রোগ গুলিতে আপনাকে পেয়ারা ছাড়া গুলিকে লাগাতে হবে। লাগানোর সময় লক্ষ্য রাখবেন যেন পেয়ারা ছাড়া গুলি ৬ থেকে ৭ ফুট অন্তর অন্তর লাগানো হয়। কেননা আপনারা সকলেই জানেন পেয়ারা গাছ বড় হওয়ার পর ডালপালা চারিদিকে অবশ্যই মেলবে। তাই কিছুটা ফাঁকা ফাঁকা লাগাতে হবে। লাগানোর পর গাছের গোড়ায় হালকা করে জল দিয়ে দিবেন।

👉গাছের পরিচর্যা

গাছ লাগানোর পরে যদি মনে হয় কোন গাছ মরে যাচ্ছে বা শুকিয়ে গিয়েছে। তাহলে ওই স্থানের গাছটিকে তুলে ওই জায়গায় অন্য আরেকটি গাছ লাগিয়ে দিতে হবে। গাছকে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নানান ধরনের কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে পারেন। যদি মনে হয় গাছেতে পিঁপড়ে বাসা বাঁধছে বা গাছের পাতাগুলো কুঁকড়িয়ে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে বিষ প্রয়োগ করবেন।

যদি অপ্রয়োজনীয় বেশি শাখা-প্রশাখা বের হয় তাহলে কিছু প্রশাখা ছেটে বাদ দিয়ে দিবেন। যদি গাছ বেঁকে গিয়ে লটকিয়ে যায় তাহলে ছোট ছোট কঞ্চি কেটে গাছের সঙ্গে বেঁধে সোজা করে দিবেন। গাছে যখন ফুল আসবে তখন আপনারা নানান ধরনের হরমোন প্রয়োগ করতে পারেন অর্থাৎ ভিটামিন , যা আপনারা কীটনাশক ঔষধ দোকানে গেলেই তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পেয়ে যাবে। এতে করে আপনার ফুলের কুঁড়ি খুব একটা ঝরে পড়বে না। এবং ফলন ভালো হবে।

গাছ চারবার ফলন দেয়ার পর গাছের শাখা প্রশাখা গুলি হালকা করে ছেটে দিবেন। এর ফলে ওর সাইট দিয়ে নতুন শাখা প্রশাখা জন্মাবে, কারণ নতুন শাখা প্রশাখা তে বেশি পরিমাণে ফলের কুড়ি হয় এবং ফল গুলোও বড় বড় হয়। তবে অবশ্যই মেন শাখা খুব একটা বেশি কাটবেন না। কারণ মেন শাখাতেই ফলন বেশি হয়।

👉 জলসেচ ব্যাবস্থা

এই চাষে জল সেচের বিশেষ ধ্যান রাখতে হবে। গাছ যখন কিছুটা বড় হয়ে যাবে তখন প্রত্যেক সপ্তাহে কমপক্ষে একবার সকালবেলা গাছে জল পাওয়াতে হবে। ফলের কুড়ি আশা অবস্থায় এবং ফল থাকা অবস্থায় দু থেকে তিন দিন অন্তর অন্তর একবার করে হালকা জল দিতে হবে। এতে গাছও পরিপুষ্ট হবে এবং ফলও পরিপুষ্ট হবে। তবে বর্ষাকালে জল সেচের পরিমাণ অন্যান্য ঋতুর তুলনায় কম লাগবে। কেননা বর্ষাকালে মোটামুটি কিছুদিন অন্তর অন্তর দৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।

👉 ফল পাড়া

গাছের ফলগুলো যখন বড় হয়ে হালকা সাদা রঙের বা হালকা হলুদ রঙের হয়ে যাবে বলে মনে হবে , অর্থাৎ পেয়ারা পারার জন্য উপযুক্ত বলে মনে হবে তখন সেগুলিকে ডাল থেকে একটা একটা ছাড়িয়ে নিতে হবে, অথবা কাঁচি বা ছুরির সাহায্যে ফল শুদ্ধ বট গুলোকে কেটে নিতে হবে। এরপর সেগুলি বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।

👉 পেয়ারা বিক্রয় পদ্ধতি

পেয়ারা বিক্রি করার জন্য আপনি আপনার নিকটস্থ বাজারের পিয়ারা নিয়ে বসে সেগুলিকে প্রতি কেজি হিসেবে বিক্রি করতে পারেন । অথবা এফেক্টিভ পেয়ারা কেক কেটে অর্থাৎ চার থেকে ছয় পিস করে তাতে বিটনুন দিয়ে বিক্রি করতে পারেন। অথবা পেয়ারাগুলোকে একেবারে কুচি কুচি করে কেটে তাতে বিটনুন, বিভিন্ন ধরনের মসলা ও বিভিন্ন ধরনের সস মিশিয়ে মসলা পেয়ারা তৈরি করেও বিক্রি করতে পারেন। মসলা পেয়ারা তৈরি করে বিক্রি করলে লাভটা কিছুটা বেশি হতে পারে। তাছাড়া পেয়ারার জুস ( benefits guava juice ) তৈরি করেও আপনি বিক্রি করতে পারেন। এবং প্রতি গ্লাস পিছু পেয়ারা জুসের দাম নির্ধারণ করতে পারেন।।

👉 পেয়ারা চাষে ( amrut farming ) খরচ

খরচ – পেয়ারা চাষে খরচ খুব একটা বেশি হয় না। কারণ এতে শুধুমাত্র বীজ কিনতেই পয়সা লাগে। আপনি চাইলে বাড়িতেও বীজ তৈরি করতে পারবেন যা আমি উপরে এর পদ্ধতি বলেছি। কিন্তু যে কোন ব্রিজের দোকান থেকে ভালো মানের হাইব্রিড পেয়ার আর বিষ কেনায় সবচেয়ে শ্রেয় হবে। আপনি ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যেই খুব ভালো মানের বীজ অনেক পরিমাণেই পেয়ে যাবেন।

তাছাড়া এতে জল সেঁচে কিছুটা খরচ হতে পারে চাইলে আপনি আপনার পুকুরের জলও বালতি করে গাছের গোড়ায় গোড়ায় দিতে পারেন। তাছাড়া কীটনাশক ঔষধেয় আপনার খরচ কিছুটা পরিমাণে হতে পারে গাছকে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। আর যদি আপনারা মজুর লাগান তাহলে আপনার হয়তো আরো হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে। যাইহোক এইচএসসি খরচ খুব একটা বেশি হয় না ৪-৫ হাজার টাকার মতো হলেই আপনি খুব ভালোভাবেই ১৫ কাঠা থেকে ১ বিঘার মতো জমি চাষ করতে পারবেন

:: আর শুধুমাত্র এক বছর গাছ লাগিয়েই যে পরের বছর গাছকে আপনাকে কেটে ফেলে দিতে হবে এমনটা নয়। আপনারা পেয়ারা গাছ থেকে ভালো মানের পেয়ারা পাঁচ থেকে ছয় বছর অবশ্যই পেতে থাকবেন। চাইলে আপনারা এরপরেও পেয়ারা গাছগুলি রেখে সেগুলি থেকে পেয়ারা পেতে পারেন তবে সে ক্ষেত্রে আপনারা ছোট মানের পেয়ারা পেতে পারেন।

আপনাকে যে কাজটি করতে হবে, প্রত্যেক সিজনেতে পেয়ারা পেড়ে নেয়ার পর গাছের ডাল গুলিকে ছোট ছোট করে চেটে নিতে হবে এর ফলে নতুন নতুন ডাল গজাবে এবং নতুন ডালে আপনার পেয়ারার কুড়ির সংখ্যা বেশি পরিমাণে বেরোবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *