business of agarbatti – আগরবাতি তৈরির ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন, আগরবাতি কীভাবে বানাবেন, কি কি কাঁচামাল লাগবে, কিভাবে বাজারজাত করবেন সম্পূর্ন তথ্য।
ধূপকাঠি ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের প্রায় সব সম্প্রদায় ধূপকাঠি ব্যবহার করে। সারা বছর বাজারে এর চাহিদা থাকে এবং পূজা-পার্বণ বা উৎসবের সময় এর চাহিদাও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। বাড়িতে সুবাস ছড়ানোর পাশাপাশি এটি কীটনাশক এবং এন্টিসেপটিক হিসেবেও ব্যাবহার হয়।
👉 আগরবাতি ব্যাবসা কিভাবে শুরু করা যায়
এই ব্যবসা একটি ঝুঁকিমুক্ত ব্যবসা কারণ এই ব্যবসা ( agarbatti business ) কম বিনিয়োগের সাথেও শুরু করা যায়। কোন ব্যবসা শুরু করার আগে প্রথমে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা উচিত, যা নিম্নরূপ:–
- প্রথমত, খরচ বা বাজেট স্থির করতে হবে।
- এর বাজার সম্পর্কে রিসার্চ করুন, যাতে আপনি এই ব্যাবসায় বাধা সম্পর্কে আগে থেকে বুঝতে পারেন।
- ব্যবসার জন্য সঠিক জায়গা চয়ন করুন।
- ব্যবসার সামগ্রী কেনা, প্যাকেজিং কিভাবে সবকিছু করতে হবে তার জন্য আগে থেকেই একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
👉 ধূপকাঠি তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল সমুহ
ধূপকাঠি তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের ( agarbatti raw material ) মূল্য নিচে উল্লেখ করা হল –
কাঁচামাল | পরিমাণ | মূল্য |
কাঠকয়লা পাউডার | ১ কেজি | ১০-১৫ টাকা |
জিগাত পাউডার | ১ কেজি | ৫৫-৬৫ টাকা |
চিপস পাউডার | ১ কেজি | ১৮-২৫ টাকা |
চন্দন গুঁড়ো | ১ কেজি | ৩০-৪০ টাকা |
বাঁশের স্টিক | ১ কেজি | ১১৫-১২০ টাকা |
পারফিউম | ১ পিস | ৪৪০-৪৫০ টাকা |
ডিইপ | ১ লিটার | ১৩০-১৪০ টাকা |
কাগজের বাক্স | ১ ডজন | ৭০-৮০ টাকা |
মোড়ানো কাগজ | ১ প্যাকেট | ৩০-৪০ টাকা |
কুপ্পাম ডাস্ট | ১ কেজি | ৮০-৯০ টাকা |
👉 ধূপকাঠি তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ
আপনি আপনার নিকটস্থ বড় বড় বাজার শহরতলীতে সহজেই ধুপ তৈরির কাঁচামাল গুলি পেয়ে যেতে পারেন। কলকাতায় কৃষ্ণা গ্রুপ, দুর্গা ইঞ্জিনিয়ারিং, লোকনাথ আগরবাতি ইত্যাদি নামে অনেক কোম্পানি ধুপ তৈরির কাঁচামাল বা উপকরণ সরবরাহ করে।
এবং বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশের ছোটো-বড়ো শহরগুলিতে খোজ করলে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল গুলি অবশ্যই পেয়ে যাবেন। এছাড়া আপনি চাইলে অনলাইনেও ধূপ তৈরির প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল গুলি কিনতে পারেন ।
👉 আগরবাতি ব্যবসার জায়গা
আপনি যদি ছোট্ট ভাবে এই ব্যবসাটি শুরু করার কথা ভাবছেন, তাহলে আপনি এটি বাড়ি থেকেও শুরু করতে পারেন। কিন্তু যদি আপনি এটিকে বড় পরিসরে করার কথা ভাবছেন, তাহলে আপনার ব্যবসা শুরু করার জন্য ৩-৪ ডিসিমল (২ কাঠার মত ) জায়গা প্রয়োজন হতে পড়ে।
👉 ধুপকাঠি তৈরি করতে সময়
আপনি যদি হাত দিয়ে নির্মাণ করেন, তাহলে আপনার কাজ করার দক্ষতার উপর নির্ভর করবে । এবং আপনি যদি স্বয়ংক্রিয় মেশিনের সাহায্যে ধুপকাঠি তৈরি করেন, তাহলে মেশিনটির কার্যক্ষমতা অনুযায়ী প্রতি ১ মিনিটে ১৫০ থেকে ১৮০ টি ধূপকাঠি তৈরি করতে পারেন।
👉 আগরবাতি ব্যবসায় খরচ
আপনি যদি এই ব্যবসাটি নিজের বাড়ি থেকে নিজে হাতে তৈরি করতে চান, তাহলে আপনার সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে ১৪ হাজার টাকার মতো খরচ পড়তে পারে ।
আর যদি আপনি ম্যানুয়াল মেশিন কিনে ধুপকাঠি তৈরি করতে চান তাহলে মেশিনের দাম ১৫ হাজার টাকার মত পড়তে পারে।
আর যদি আপনি semi-automatic মেশিন কিনতে চান বেশি উৎপাদনের জন্য তাহলে আপনার ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার মত মেশিনের দাম পড়তে পারে।
এছাড়া যদি আপনি হাইস্পিড যুক্ত সেমি অটোমেটিক মেশিন কিনতে চান তাহলে তার দাম ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মত পড়তে পারে।
👉 হাতে ধূপকাঠি তৈরির প্রক্রিয়া (agarbatti making process)
সাধারণত, দুই ধরনের ধূপ কাঠি বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদিত হয়, একটি অ্যান্টিসেপটিক ধূপের আকারে এবং অন্যটি সুগন্ধি ধূপের আকারে।
প্রথম – ধূপ তৈরির ( how agarbattis are made ) জন্য প্রিমিক্স পাউডার, কাঠকয়লার গুঁড়ো, কাঠের গুঁড়া এবং জিগাত পাউডারের মিশ্রণ করুন পরিমাণ অনুযায়ী।
তারপর – এতে ১ থেকে ১.৫ ( দেড় ) লিটার জল যোগ করুন এবং ভালোভাবে মিশ্রন করুন এবং মিশ্রণটি যেন শক্ত শক্ত ভাব হয় ।
তারপর – এটি একটি পাতলা বাঁশের তৈরি সরু কাঠি বা স্টিকে পেস্ট করুন । এরপরে এটি সুগন্ধি তেলে ডুবিয়ে নিন সুগন্ধি আগরবাতির জন্য।
এরপর – এটিকে শুকিয়ে নিন এবং শুকানোর পরে এটি প্যাক করা হয়।
👉 আগরবাতি সুগন্ধি করার প্রক্রিয়া
যদি আপনি সুগন্ধি ধূপকাঠি বানাতে চান, তাহলে শুকানোর পরে ধূপের কাঠিগুলি একটি বিশেষ ধরনের সুগন্ধি ( পারফিউম ) উপাদানে নিমজ্জিত করা হয়। এর জন্য বাজারে পাওয়া ডায়াথাইল ফ্যথালেট যাকে সংক্ষেপে DEP বলা হয়। 4 লিটার DEP এ 1 লিটার সুগন্ধি ( পারফিউম ) মিশ্রিত করা হয়, এতে ধূপকাঠি ডুবানোর পর তারপর এটি প্যাকিং করা হয়।
👉 ধূপকাঠি তৈরিতে যে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
আগরবাতি কখনই রোদে শুকানো উচিত নয়, সবসময় ছায়ায় শুকিয়ে নিন বা শুকানোর মেশিনের মাধ্যমে শুকিয়ে নিন। এটি শুকানোর জন্য একপাশে রাখুন। যদি আপনি এটি না করেন, তাহলে ভেজা থাকার কারণে তাদের আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
👉 আগরবাতি তৈরির মেশিন
আপনি যদি মেশিনের সাহায্যে বেশি পরিমাণে ধূপকাঠি বানাতে চান। তাহলে এর জন্য আপনাকে কিছু মেসিন এবং সরঞ্জাম কিনতে হবে। জানিনা উল্লেখ করা হলো।
> ম্যানুয়াল মেশিন :- ম্যানুয়াল মেশিন ( agarbatti machine ) চালানো খুবই সহজ, এটি ডাবল এবং সিঙ্গেল প্যাডেল উভয় ধরনের হয়ে থাকে। এর খরচও কম, পাশাপাশি এটি লং লাস্টিং এবং উন্নত মানের। ম্যানুয়াল মেশিনের সাহায্যে এই ধরনের ধুপকাঠি তৈরী করলে উৎপাদন ভালো মানের সাথে উন্নত পাওয়া যায়। যদি আপনি ম্যানুয়াল মেশিন ( making agarbatti machine ) কিনে ধুপকাঠি তৈরি করতে চান তাহলে মেশিনের দাম ১৫ হাজার টাকার মত পড়তে পারে।
> স্বয়ংক্রিয় মেশিন :- আপনি যদি মাঝারি ধরনের ধূপ তৈরির ব্যবসা করতে চান, তাহলে স্বয়ংক্রিয় মেশিন আপনার জন্য বেস্ট হবে। এটি বিভিন্ন সাইজের এবং ডিজাইনের বাজারে পাওয়া যায়, স্বয়ংক্রিয় মেশিনের সুবিধা হল এই মেশিন দ্বারা এক মিনিটে ১৫০ থেকে ১৮০ টি ধুপকাঠি তৈরি করা যায়। এই মেশিনের দাম পড়তে পারে প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকার ( agarbatti making machine price ) মত।
> হাই স্পিড মেশিন :- এই ধরণের মেশিনে আপনার কম কাজের লোক কম লাগবে। এটি একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় মেশিন। এটি ব্যবহার করে কম সময় ও কম শ্রমে মেসি ধূপকাঠি তৈরি করা যায়। এই মেশিনের মাধ্যমে এক মিনিটে ৩০০ থেকে ৪০০টি ধূপ তৈরি করা যায়। যদি আপনি হাইস্পিড যুক্ত সেমি অটোমেটিক মেশিন কিনতে চান ( agarbatti making machine with price ) তাহলে তার দাম ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার মত পড়তে পারে।
> ধূপ কাঠি শুকানোর মেশিন :- আগরবাতি শুকানোর মেশিন বাজারে বিভিন্ন ধরনের পাওয়া যায়। এই মেশিনটি কিনে আপনি প্রতি ঘন্টায় ১৮ – ১৯ কেজি ধূপকাঠি শুকিয়ে ফেলতে পারেন। এই মেশিনটি প্রায় ২৫,০০০ টাকা ( price of agarbatti making machine ) পর্যন্ত পরতে পারে। কিন্তু আপনি চাইলে ফ্যান অর্থাৎ পাখার সাহায্যেও ধুপকাঠি শুকিয়ে নিতে পারেন।
:: এই মেশিন গুলি আপনি হয়তো আপনার নিকটস্থ বড়ো বড়ো শহরগুলিতে খোঁজ করলে পেয়ে যেতে পারেন। আর যদি আপনি অনলাইনে কিনতে তাহলে অনলাইনে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন।
👉 আগরবাতি ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স এবং ডকুমেন্ট
আগরবাতি তৈরির ব্যবসাটি বড় আকারে করার জন্য আপনার কিছু ডকুমেন্ট ও লাইসেন্স করা প্রয়োজন যথা –
ট্রেড লাইসেন্স – আপনি ব্যবসাটি ছোট করেই করুন বা বড় করেই করুন। আপনার ব্যবসাটি বাংলাদেশি করুন বা ভারতেই করুন বা অন্য যে কোন দেশেই করুন না কেন ট্রেড লাইসেন্স আপনাকে অবশ্যই করতে হবে। যা আপনারা নিকটস্থ সরকারি অফিস থেকে করে নিতে পারবেন।
কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন – আপনি যদি এই ব্যবসাটি ছোট করে করেন তাহলে কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু যদি আপনি বড় আকারের ব্যবসাটি করতে যান তাহলে এর জন্য আপনাকে কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট – এই ব্যবসাটি যেহেতু ধুলো বা গুরুজাতীয় উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত। তাই এর জন্য আপনাকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে।
ভ্যাট বা GST রেজিস্ট্রেশন – আপনি যদি ছোট আকারের ব্যবসাটি করেন তাহলে ভ্যাট বা জিএসটি রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন নাই। কিন্তু আপনি যদি বড় আকারের ব্যবসাটি করতে চান তাহলে, বাংলাদেশে হলে ভাট রেজিস্ট্রেশন এবং ভারতে হলে GST রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
:: তো এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন যে আগরবাতি তৈরির কাঁচামাল থেকে শুরু করে আগরবাতি তৈরির জন্য মেশিন, আগরবাতি তৈরির পদ্ধতি এবং এর জন্য কি কি লাইসেন্সের প্রয়োজন, এ ছাড়া কিভাবে আপনারা একে বাজারজাত করবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত ( business of agarbatti ) জানতে পেরে গেলেন। এখনো যদি এই সম্পর্কে কিছু জানার থাকে তো আপনারা রিসার্চ করে জেনে নিবেন অথবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে আপনারা ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পেরে যাবেন। ধন্যবাদ !