curd Making Business – দুধ থেকে দই তৈরির ৫টি পদ্ধতি, কি কি কাঁচামাল ও সরঞ্জামের প্রয়োজন, খরচ ইত্যাদি বিস্তারিত জানুন।

Curd Making Business

yogurt বা curd এর বাংলা অর্থ হলো দই ( yogurt meaning in bengali ) । এটি একটি সুস্বাদু খাবার। দই কে না খেতে পছন্দ করে। দৈনন্দিন ভাতের সঙ্গে, বিয়ে বাড়িতে বা অন্যান্য উৎসব অনুষ্ঠানে মেহমানদের খাবারের সাথে দই দেওয়া হয়। বা মানুষ নিজের শখ স্বাদের জন্যও দই খেয়ে থাকে। অনেকের কাছে আবার দই প্রিয় খাবার।

মোদ্দা কথা দেখলে দেখা যায় যে দই সারা বছর ধরেই দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা পূরণ করে আসছে। মানুষ খাওয়া-দাওয়ার এর প্রতি যতদিন আগ্রহী থাকবে, ততদিন পর্যন্ত মানুষের দইয়ের চাহিদা থেকেই থাকবে। আপনারা এটাও পরিলক্ষিত করেছেন যে কেউ যদি আত্মীয় বাড়ি যায় তাহলে দই, মিষ্টি নিয়ে যায়।

নিম্নে এই পোস্টের মধ্যে উল্লেখ করা হল, দই তৈরির জন্য কি কি প্রয়োজন হবে, এবং দই তৈরি করে তা কিভাবে ব্যবসা করবেন।

📝👉 দই তৈরির ব্যাবসার সুবিধা

  • এই দই তৈরির ব্যবসায় খরচ খুবই কম হয়।
  • প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।
  • এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গুলির মূল্য খুবই কম।
  • ক্ষতির সম্মুখীন খুবই কম হয় বা হয়নি বললেই চলে।
  • দুই তৈরির জন্য তেমন কোন মেশিনের প্রয়োজন হয় না।
  • তুই যেহেতু পুষ্টিগুনে ভর্তি এবং সুস্বাদু একটি খাবার তাই এর চাহিদা সব সময় থাকে।

📝👉 কি কি সরঞ্জামের প্রয়োজন

দুধ – প্রধান যে কাঁচামালের প্রয়োজন তা হল উচ্চ ফ্যাট যুক্ত দুধ। দুধ কোন গরুর হতে পারে বা কোন মহিষেরও হতে পারে। যত বেশি ফ্যাট থাকবে দই তত ভালো জমাট বাঁধবে। অর্থাৎ দুধ যেন আপনার খাঁটি দুধ হয় বেশি জল মেশানো যেন না হয়। আপনার নিজের বাড়িতে যদি গরু বা মহিষ থেকে থাকে এবং সে যদি দুধ দেয় সেই দুধ দিয়েও আপনি দই তৈরি করতে পারেন। অথবা গোয়ালার কাছ থেকে খুব সহজেই আপনি দুধ পেয়ে যাবেন। তার সঙ্গে কথা বলে নিবেন যে আমি দুধ দই তৈরি করার জন্য ব্যবহার করব আমার কাছ থেকে লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি নেবে কিন্তু আমাকে খাঁটি দুধ দিতে হবে।

মিস্টি জাতীয় – যদি আপনি টক দই তৈরি করেন তাহলে এর জন্য আপনার কোন মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আপনি মিষ্টি দই তৈরি করতে চান, তাহলে দই কে মিষ্টি করার জন্য চিনি বা মিছরির প্রয়োজন হবে। চিনি বা মিছরি আপনি আপনার নিকটস্থ যে কোন মুদি দোকান থেকে অবশ্যই পেয়ে যাবেন।

ডিসের বড় পাত্র – দুধ গুলোকে দই বসানোর পূর্বে ভালো করে ফুটিয়ে গরম করে নিতে হবে। তাই গরম করার জন্য আপনার একটি বড় ডিসের পাত্রের প্রয়োজন হবে। যা আপনারাবাজারে যেকোনো কাঁসা-পিতল বা ডিসের দোকানে অবশ্যই পেয়ে যাবেন।

থার্মোকোণের ডাব্বা বা মাটির হাড়ি – দুধগুলোকে দই বসানোর জন্য মাটির হাড়ি বা থার্মোকলের ডাব্বার প্রয়োজন হবে। তো আপনি যে ওজনের দই বসাতে চান সেই ওজনের অনুপাতে মাটির হাড়ি বা থার্মোকলের ডাব্বা গুলো কিনে নিবেন। মাটির হাড়ি আপনি কুমরের কাছ থেকে পেয়ে যাবেন। এবং থার্মোকলের ডাব্বা আপনি যে কোন মুদি দোকানে পেয়ে যেতে পারেন।

চামচ – চিনি বা মিছরি মেশানোর জন্য একটি বড় চামচের প্রয়োজন হবে। তবে ই চিনি বা মিছিলটি দুধের মত ভাল করে গুলে যাবে।

ফ্রিজ – দুধকে খুব ভালোভাবে জমাট বাধানোর জন্য। বা তৈরি করার দই যাতে বহুদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়, তার জন্য আপনাকে একটি ফ্রিজ বা রিফরাজেরেটর কিনতে হবে।

অন্যান্য উপকরণ – দই বিভিন্নভাবে বসানো যায়, তাই বিভিন্ন পদ্ধতির জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম লেগে থাকে। দই বসানোর বিভিন্নতা অনুযায়ী আপনার জমাট বাধা এক চামচ দই, বা কাঁচা লঙ্কা, বা শুকনো লঙ্কা, বা লেবু, বা সিলভার কয়েন ইত্যাদির প্রয়োজন হতে পারে।

📝👉 দই তৈরির পদ্ধতি (curd making at home)

নিম্নে দই তৈরির পদ্ধতি স্টেপ বাই স্টেপ উল্লেখ করা হল –

👨‍🍳 প্রথম স্টেপ – প্রথমে একটা বড় ডিসের পাত্রে সমস্ত দুধ ঢেলে নিতে হবে । এরপর দুধের পাত্রটিকে উনুনে বসিয়ে গরম করে নিতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত দুধ ফুটছে ততক্ষণ পর্যন্ত দুধ গরম করে যেতে হবে।

👨‍🍳 দ্বিতীয় স্টেপ – এরপর দুধ কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিয়ে দুধের পাত্রটিকে উনান থেকে নামিয়ে নিতে হবে। এবং হালকা ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে। এরপর যখন মোটামুটি হালকা ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন ওই দুধগুলোকে মাটির হাড়িতে বা থার্মকনের ডাব্বায় ভরে নিতে হবে। এখানে মাটির হাড়ি বা থার্মকনের ডাব্বা আপনি ওজন অনুপাতে কিনে নিবেন। যদি পাত্রগুলি বড় মনে হয়, তাহলে একটা ওজনের দুধ মেপে নিবেন এবং সেই অনুপাতে দুধ আপনারা প্রত্যেকটাতে ঢেলে দিবেন।

তবে যে পরিমাণের ওজনের দুধ বাজারে বেশি বিক্রি হয় তা হল ১০০ গ্রাম, ১৫০ গ্রাম, ২৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম, এবং ১ কেজির। তো আপনারা এই ওজনের দই বেশি পরিমাণে বসাতে পারেন। তবে বাজারঘাটে খাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে ১০০ গ্রাম বা ১৫০ গ্রামের দই। তবে মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী আপনাকে ওই ওজনের দই বসাতে হবে।

এরপর দই কে বসানোর জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে, নিম্নে দই বসানোর পাঁচ রকম পদ্ধতি (curd making at home) উল্লেখ করা হল

১ নম্বর পদ্ধতি – এই পদ্ধতিতে দই বসানোর জন্য দুধের সঙ্গে এক থেকে দুই চামচের মত বসানো দই ( curd making at home) মিশাতে হবে। এরপর ৬ থেকে ৭ ঘন্টা রেখে দিলে খুব ভালোভাবেই দই বসে যাবে (how to make quick curd)। আর এই পদ্ধতি ফলো করেই বেশিরভাগ দই বসানো হয়ে থাকে।

২ নম্বর পদ্ধতি – এই পদ্ধতিতে দই বসানোর জন্য একেবারে হালকা গরম দুধের সঙ্গে প্রয়োজন অনুপাতে লেবুর রস দিতে হবে। যেমন যদি ১০০ – ১৫০ গ্রাম দুধের সঙ্গে হাফ হাফ চামচের মত লেবুর রস দিতে হবে। আড়াইশো গ্রাম দুধের সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস দিতে হবে। এবং ৫০০ গ্রাম দুধের সঙ্গে দু চামচ লেবুর রস দিতে হবে। এক কেজি দুধের সঙ্গে তিন চামচের মতো লেবুর রস দিতে হবে। তবেই দুধগুলি ভালোভাবে দইয়ে পরিণত হবে। এরপর দুধের পাত্রটি হয় ফ্রিজে না হলে অন্য কোন জায়গায় রাখতে হবে । কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘন্টা রাখবেন।

৩ নম্বর পদ্ধতি – এই পদ্ধতিতে দুধের সঙ্গে শুকনো লঙ্কা গোটা ডুবিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন লঙ্কা যেন কোথাও ছেড়া বা ভাঙা না হয়। পুরোপুরি যেন গোটা হয়, না হলে হয়তো দই হালকা ঝাল হয়ে যেতে পারে। ২৫০ গ্রাম দুধ বসানোর জন্য দুটি শুকনো লঙ্কা । ৫০০ গ্রাম দুধ বসানোর জন্য তিনটি শুকনো লঙ্কা। এবং এক কেজি দুধ বসানোর জন্য চারটা শুকনো লঙ্কা ডুবিয়ে দিবেন। গোটা লঙ্কা ডুবাতে না চান তাহলে লঙ্কার যে বট, সেই বট গুলিকে ছাড়িয়েও আপনি দিতে পারেন। কেননা লঙ্কার বট টাই দুধকে দই বসানোর জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করে। এরপরে 8 থেকে 9 ঘন্টা যেকোনো জায়গায় রেখে দিবেন।

৪ নম্বর পদ্ধতি – এই পদ্ধতিতে দুধের সঙ্গে আপনাকে কাঁচা লঙ্কা ডুবতে হবে। তবে কাঁচা লঙ্কা গোটা যদি আপনারা ঢুকাতে না চান তাহলে উপরের মতোই কাঁচা লঙ্কার বর টিকে ডুবিয়ে দিবেন। মনে রাখবেন ১০০ গ্রাম দই বসানোর জন্য একটি কাঁচা লঙ্কার বট। ৫০০ গ্রাম দুই বসানোর জন্য চার থেকে পাঁচটি কাঁচা লঙ্কার বট ডুবিয়ে দিবেন। এবং এটি কেউ আপনি 8 থেকে 9 ঘন্টা রেখে দেবেন।

৫ নম্বর পদ্ধতি – এই পদ্ধতিতে আপনারা দইয়ের সঙ্গে রুপোর কয়েন ডুবিয়ে দিবেন। এরপর এটিকে ১১ থেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত যেখানে জায়গায় রেখে দিবেন। এরপরে দেখবেন খুব ভালোভাবেই দই বসে গিয়েছে।

ওপরের যে সমস্ত দৈ বসানোর পদ্ধতি গুলি উল্লেখ করা হল। প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে সময় ১ থেকে ২ ঘন্টা হয়তো বেশি করে লাগতে পারে। আর প্রত্যেকটি পদ্ধতিতেই যে নিয়ম বলা হয়েছে সেগুলিকে ফলো করে দুধের পাত্রগুলিকে ভালোভাবে কিন্তু ঝাকা দিয়ে দিবেন বা কোন কিছু কাগজ দিয়ে রাবারের মাধ্যমে আটকে দিবেন। তাহলে খুব ভালোভাবে জলদি দই বসবে। আর যদি আপনারা খুব দ্রুত এবং খুব ভালোভাবে দই বসাতে চান তাহলে দুধের কৌটো গুলোকে যা আপনারা দুই বসানোর জন্য তৈরি করেছেন সেগুলিকে ফ্রিজে নিয়ে গিয়ে রেখে দিবেন। তাহলে দেখবেন উপরে উল্লেখিত সময়ের থেকে এক থেকে দুই ঘন্টা আগেই দই বসে যাবে।

👉 প্রয়োজনীয় লাইসেন্স

আপনি যদি একেবারে ছোট্ট আকারে ব্যবসাটি শুরু করতে চান তাহলে আপনার খুব একটা লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না। আর আপনি যখনই একটি বড় আকারের ব্যবসা করতে যাবেন তখনই আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স, খাদ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত লাইসেন্স আরো অন্যান্য লাইসেন্স করতে হতে পারে। তবে যে লাইসেন্সই করুন না কেন এটি আপনার দইয়ের গুণমানকে বৃদ্ধি করবে।

👉 খরচ

খরচ – এই ব্যবসায় খরচে যদি কথা বলা হয় তাহলে দুধ কিনতে খরচ হতে পারে, প্রতি লিটার কিছু চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকার মত দুধের ফ্যাট অনুপাতে। থার্মোকলের ডাব্বা যা প্রতি পিস পিছু এক থেকে ৫ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। চিনি যা আপনারা প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকার মধ্যে পড়তে পারে। আর যদি একটি ফ্রিজ নেন তার জন্য আপনার একটু বেশি খরচা হতে পারে মোটামুটি ফ্রিজ নিতে গেলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো পড়বে। নিলে ভালো হয় তাহলে আপনি অনেকদিন পর্যন্ত দই সঞ্চয় করে রাখতে পারবেন।

আপনি যদি ১ কেজির একটি দই তৈরি করেন তাহলে আপনার দুধে লাগবে ৩৫-৪০ টাকার মতো, চিনি লাগবে আপনার ৫ টাকার মত, ডাব্বা লাগবে ১ টি জা ২-৩ টাকার মতো। সব মিলিয়ে দেখা যাবে আপনার সর্বোচ্চ ৫০ টাকার মতো খরচ হবে ।

👉 মার্কেটিং

বাজারে খোঁজ করে দেখতে হবে যে কোন দইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আপনাকে ওই দই সবচেয়ে বেশি তৈরি করতে হবে। এবং বাজার মূল্য থেকে কিছুটা কম দেবে ভালো মানের দই গ্রাহকদের দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

দই ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য আপনি বিভিন্ন মিষ্টির দোকান বা স্টেশনারি দোকান যেখানেতে ফ্রিজ রয়েছে, কোলড্রিংসের দোকান, আইসক্রিমের দোকান ইত্যাদি জায়গায় আপনি দই গিয়ে দিতে পারেন।

এছাড়া আপনি যদি খুব বড় আকারের ব্যবসা করতে চান। তাহলে আপনার ব্যবসার নামে লোগো তৈরি করা বাক্স বা খাপ কিনতে হবে, এবং তাতে দই তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় ডিস্ট্রিবিউশন করতে হবে। এবং আপনার ওই দইয়ের নাম অনুসারে টিভি চ্যানেল, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাড দেখাতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *