Sesame cultivation – তিল চাষের পদ্ধতি, চাষের সময়, উচ্চফলনশীল বীজ, জলসেচ, চাষে খরচ সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত।
চাষের কথা যদি আসে তাহলে তিল চাষও একটি বিশেষ ধরনের চাষ। যা যেকোনো ধরনের বিশেষ বিশেষ খাবার তৈরিতেও ব্যবহার হয়ে থাকে। তিল এমনই একটি চাষ যা খরা প্রবণ এলাকাতেও খুব ভালোভাবে হয়ে থাকে। তেল চাষের জন্য খুব একটা বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন নাই।
তিল চাষ এমন একটি চাষ যা থেকে তিনগুণ পর্যন্ত লাভ পাওয়া যায়। কেননা এইচ আছে খরচা খুব একটা হয় না বললেই চলে। যেমন খুব একটা বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয় না বা খুব একটা জল সেচেরও প্রয়োজন হয় না।
তিল চাষ ধান বা গম কাটার পরেও লাগানো যেতে পারে বা যে সমস্ত এলাকাতে খুব ভালো জল সেচের ব্যবস্থা নাই, সে সমস্ত এলাকাগুলিতে অনায়াসে তিল চাষ করা যেতে পারে। আর তিল চাষের জন্য খুব একটা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ এই তিল চাষে কম খরচের সঙ্গে সঙ্গে পরিশ্রম খুবই কম হয় ।
তাছাড়া এই তিল থেকে তিলের নাড়ু, বিভিন্ন বিস্কুট তৈরি, রান্না বা খাবার তেল তৈরি করা হয়ে থাকে। এছাড়াও আরো অনেক খাদ্য সামগ্রী তৈরি করা হয়ে থাকে এই তিল থেকেই। তাই সারা বছর তিলের চাহিদা খুব ভালো থেকেই থাকে। নিম্নে তিল চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
👉 তিল চাষের আবহাওয়া
তিল চাষের জন্য আবহাওয়া খরা মৌসুম হলে খুবই ভালো । তবে যাই হোক এক থেকে দুই বার বৃষ্টিপাত হলে আরো ভালো। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া তিল চাষের পক্ষে অনুকূল নয়। তিনি যখন লাগানো হয় তখন মোটামুটি হালকা গরমযুক্ত আবহাওয়া থাকলেও চলে। কিন্তু তিল যখন পরিপক্ক অবস্থায় থাকবে সেই সময় রোদ্রউজ্জ্বল আবহাওয়া থাকলে খুবই ভালো।
👉 তিল চাষের উপযুক্ত জন্য মাটি
তিল চাষ যেকোনো ধরনের মাটিতেই হয়ে থাকে। আপনার এলাকায় যদি বেলে মাটি বা দোয়াশ মাটি বা এঁটেল মাটি, যে কোন মাটিই থাকুক না কেন আপনি সেই মাটিতে তিল চাষ করতে পারেন। তবে মাটি যত উর্বর পূর্ণ হবে তত তিলগাছ পুষ্টিকর হবে। এবং তিলগাছ পুষ্টিকর হলে সেই গাছের তিলের ফলন ভালো হবে এবং তিলের দানাও পুষ্টিকরযুক্ত হবে।
যদি আপনার মাটি উর্বর পূর্ণ না হয়। তাহলে জমিনেতে জল পাওয়ানোর সময় গোবর ছড়িয়ে দিতে পারেন। তাহলে আপনার মাটিটা কিছুটা হলেও উর্বর পূর্ণ হয়ে যাবে, তবে অবশ্যই মনে রাখবেন সেই সময় বা তিল লাগানোর সময় কোন রাসায়নিক সার কিন্তু প্রয়োগ করবেন না। এতে আপনার তিলের চারাগাছ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
👉 তিল লাগানোর সময়
তিল গাছ আপনি ধান বা গম বা আলু উঠে যাওয়ার পর, সেই জমিতেই আপনি তিল চাষ করতে পারেন। তবে বছরে আপনি দুই সময় তিল লাগাতে পারেন, রবি মৌসুমে জুনের লাস্টের দিক অথবা জুলাইয়ের প্রথমে দিকে তিল লাগাতে পারেন।
আর যদি আপনি খরিফ মরশুমে তিল চাষ করতে চান। তাহলে আপনার জমিনে বর্তমানে যে ফসল রয়েছে সেই ফসল উঠে যাওয়ার পরেও চাষ করতে পারেন। তবে ফেব্রুয়ারির শেষের দিক অথবা মার্চের প্রাথমিক দিক হলো তিল চাষের জন্য উপযুক্ত সময়।
👉 উন্নত মানের তিল বীজ
আপনি আপনার নিকটবর্তী সরকারি বীজভবনে অথবা বীজ বিক্রয় দোকানে যাবেন। এবং তাদের কাছ থেকেও জেনে নিবেন, যে বর্তমানে কোন কোন তিলের জাত গুলি ভালো ফলন দিচ্ছে, তখন আপনি সেই তিলের জাত গুলো চাষ করতে পারেন।
👉 তিল লাগানোর জমি প্রস্তুতি
তিল চাষের ক্ষেত্রে প্রস্তুতির জন্য প্রথমে আপনাকে জমিনে জল পাওয়াতে হবে । এরপর জমিনে যখন বাত চলে আসবে, অর্থাৎ যখন মাটিটা হালকা শুকনা হয়ে যাবে, তখন জমিনেতে হাল অর্থাৎ একবার নাঙ্গল দিয়ে তিল বীজ ছড়াতে হবে।
👉 লাগানোর জন্য বীজ প্রস্তুত করা
নাঙ্গলের পর জমিতে তিল বীজ ছড়ানোর জন্য তিলবীজকে প্রস্তুত করতে হবে। এর জন্য তিলবীজকে দু থেকে এক দিন জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত তিলের মুখগুলো হালকা সাদা হচ্ছে। সাদা বলতে এখানে হালকা অঙ্কুরোদগম। তবেই বীজগুলি জমিনেতে ছাড়ানোর জন্য উপযুক্ত হবে। একর পিছু আপনার তিল বীজ লাগবে আড়াই থেকে তিন কেজি।
👉 জলসেচ ব্যবস্থা
তিল খুব বেশি জল সহ্য করে না। তবে তিল চাষের জন্য মোটামুটি তিনটা জলসেচ প্রয়োজন হয়ে থাকে। প্রথম সেচ তিল বীজ লাগানোর আগে। দ্বিতীয় সেচ তিলগাছে ফুল আসার সময়। তৃতীয় ফসল পাকার পূর্বে অর্থাৎ যখন তিলের মধ্যে দানা আসে।
👉 আগাছা পরিস্কার
তিলের চারা গাছ যখন এক চাখরের মত হবে, তখন ছোট ছোট কোদালের সাহায্যে তিল গাছের চারিপাশ কোদাল দিতে হবে। এর ফলে তিল গাছের আশেপাশে যে সমস্ত আগাছা থাকবে সেগুলি পরিষ্কার তো হবেই, এর সঙ্গে তিল গাছের গোড়ার মাটিও হালকা হবে। এর ফলে তিল গাছ তার শাখামূল এবং প্রশাখামূল গুলিকে খুব সহজে প্রসার করতে পারবে।
👉 সার ও কীটনাশক ব্যবহার
যদি মাটির উর্বরতার হার কম হয় তাহলে আপনি বীজ ছড়ানোর পূর্বে, যে প্রথম সেচ দিবেন সেই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে গোবর ছড়াতে পারেন। দ্বিতীয়ত বীজ ছড়ানোর একমাস পর আপনারা চাইলে কিছুটা ইউরিয়া ও ফসফরাস সার ছড়াতে পারেন।
যদি আপনার গাছেতে কোনরকম পোকামাকড় লাগে তাহলে আপনাকে প্রয়োজন মাফিক কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর তিল গাছের জন্য নানান ধরনের কীটনাশক ঔষধ বের হয়। আপনারা চাইলে যে কোন কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে পারেন। যেমন হামলা, শক্তিমান ইত্যাদি। এছাড়া বীজ শোধন করার জন্য ব্লিচিং পাউডার বা থিরাম ব্যবহার করতে পারেন।
👉 খরচ
খরচ :- তিল চাষ একেবারে কম বিনিয়োগের চাষ। এই চাষে খরচ খুবই কম হয়। কেননা এই চাষে জল সেছে খুব একটা প্রয়োজন হয় না এবং মজুরের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে । শুধুমাত্র তিলের বীজ কেনার প্রয়োজন হবে, কিন্তু যদি তিলের বীজ আপনার বাড়িতে থাকে তাহলে তিলের বীজ কেনারও প্রয়োজন হবে না, যদি আপনারা গত বছর তিল চাষ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই থাকতে পারে। মোটামুটি তিল বীজ, জলসেচ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক সবমিলিয়ে আপনার প্রতি একর পিছু ৩০০০-৪০০০ এর মতো খরচ হতে পারে।
👉 ফসল কাঁটা ও ঝারাই
তিল বীজ বপন করার পর আনুমানিক তিন মাস পর তা কাটার জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়। বিশেষত যখন দেখবেন যে তিলের খোসা গুলো হলুদ রঙের হয়ে গিয়েছে, তখনই তিল গাছ কাটার জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়। আর ওই সময় বেশিরভাগ গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে যায়। যাইহোক তিলের ফল যখন হালকা হলুদ রঙের হয়ে যাবে তখনই আপনারা তিল গাছগুলিকে কেটে নিতে পারেন।
তিল গাছ কাটার পর সেগুলিকে জাক দিতে হবে। যাতে করে তিল গাছগুলি গুমে যায়। গুমে যাওয়ার পর দেখবেন যে তিলগাছ এবং খোসা গুলি কালো রঙের হয়ে যাবে। তখন সেগুলিকে পলিথিন অর্থাৎ ত্রিপলের ওপরে রোদেতে মেলতে হবে। সারাদিন রোদে মেলা থাকার পর তিলের খোসাগুলি ফেটে যাবে এবং তিল ঝরে পলিথিন বা ত্রিফলের উপরে পড়ে যাবে।
দেখবেন কিছু পরিমাণে পড়বে কিছু পরিমাণ খোসার মধ্যে থেকে যাবে, তো আপনাকে কি করতে হবে, সারাদিন রোদ লাগার পর বিকেলের দিকে তিলের গাছগুলিকে ঝেড়ে নিতে হবে। এর ফলে তিলের খোসার ভেতরের তিলের দানা গুলো ঝরে পড়ে যাবে। এরপর আপনার দানাগুলির সঙ্গে তিলের পাতা সমেত অনেক আবর্জনা থাকবে। আপনাকে ওই তিলের দানা সমেত আবর্জনা গুলিকে সরু চালতির সাহায্যে চালতে হবে, যাতে করে তিলের দানাগুলো জালতির মাধ্যমে নিচে পড়ে যায় এবং আবর্জনা গুলো জালতির ওপরে থেকে যায়।
এরপর আপনার একেবারে ফ্রেশ তিল পাওয়া যাবে, সেগুলিকে আপনি বস্তাবন্দি করে তিলের গোলাতে বা যেখানেতে তিলমান্ডি রয়েছে সেখানে বিক্রি করতে পারেন ।