plastic bottle making – প্লাস্টিক বোতল তৈরির পদ্ধতি, কাঁচামাল, মেশিন, লাইসেন্স, খরচ ও বিক্রির পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত।
বর্তমানে অন্যান্য উপকরণের বোতল অপেক্ষা প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদিও সরকার প্লাস্টিকের তৈরি থলি বা অন্যান্য উপকরণের উপর বিশেষভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তবুও প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন উপকরণের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
এই ব্যবহারের অন্যতম কারণ হচ্ছে, প্লাস্টিকের তৈরি জিনিস মোটামুটি টেকসই হয় এবং খুবই অল্প মূল্যে কেনা যায়। তাছাড়া প্লাস্টিকের তৈরি যেকোনো জিনিসই খুবই হালকা হয়ে থাকে তাই যে কোন জায়গা নিয়ে যেতে পরিশ্রম খুব একটা হয় না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এর ব্যবহার আগামী কুড়ি বছরের মাত্রাতিকভাবে বাড়বে।
আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন যে কোন ধরনের জলের বোতল, তেলের ও জুস অথবা কোল্ড্রিংসের বোতল প্লাস্টিকেরই হয়ে থাকে। তাছাড়া বর্তমানে সাধারণ মানুষ জল বা দুধ নিয়ে যাওয়া আসার জন্য প্লাস্টিকের বোতলই বেশি ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ কিন্তু প্লাস্টিকের বোতলের মধ্যে প্রদান করা হচ্ছে।
তাই যতদিন না পর্যন্ত সরকার সম্পূর্ণভাবে যেকোনো ধরনের প্লাস্টিকের বানানো পণ্য তৈরির ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। ততদিন পর্যন্ত কোন না কোন খাতেই প্লাস্টিকের ব্যবহার কিন্তু হতেই থাকবে। তাছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধাতুর যোগান কিন্তু দিন দিন কিছু না হলেও হ্রাস পাচ্ছে বিশেষত যেগুলি দিয়ে বোতল তৈরি হয়।
তাই ওই সমস্ত ধাতু দিয়ে বোতল বা অন্যান্য পণ্য তৈরি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। আর তৈরি হলেও ভারী ও দাম বেশি কারণে মানুষ কিনছে না। সেই ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের তৈরি বোতলের ব্যবহার মাত্রাতিকভাবে বেড়ে চলছে। এই পরিস্থিতিতে আপনি যদি প্লাস্টিকের বোতল তৈরীর ব্যবসা শুরু করেন। তাহলে আপনার ব্যবসাটি মোটামুটি খুব ভালোভাবে চলবে বলে অনুমান করা যায়।
আজকের এই পোস্টটিতে প্লাস্টিকের বোতল তৈরির সম্পূর্ণ পদ্ধতি সহ ব্যবসায়িক তথ্য পেয়ে যাবেন। যা নিম্নে বর্ণনা করা হয়েছে।
✍️ প্লাস্টিকের বোতল তৈরির জন্য কাঁচামাল
প্লাস্টিকের বোতল তৈরির জন্য প্রধান যে কাঁচামাল তা হল প্লাস্টিক বা পলিমার অথবা পলিথিন। এছাড়া বিভিন্ন রঙের বোতল এবং ঢাকনার জন্য বিভিন্ন রং।
✍️ প্রয়োজনীয় মেসিন ( bottle making machine )
প্লাস্টিকের বোতল তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের মেশিনের (plastic bottle making machine) প্রয়োজন হয়ে থাকে যেমন ব্লো মোল্ডিং মেশিন, বোতলে কোন কিছু লেখার জন্য প্রিন্টিং মেশিন, বোতল প্যাকেজিংয়ের জন্য প্যাকেজিং মেশিন, পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য পাওয়ার মেশিন, ইত্যাদি।
✍️ প্রয়োজনীয় জায়গা
মোটামুটি মিডিয়াম জায়গা হলেই আপনি এই ব্যবসাটি করতে পারবেন। কারণ মেশিন বসানো এবং বোতল গুলি তৈরির পর সেগুলিকে সাজিয়ে রাখা ইত্যাদির জন্য জায়গার প্রয়োজন। তবে মোটামুটি আপনার যদি ১০ থেকে ১২ ডেসিমাল জায়গা থাকে তাহলে আপনি ওই জায়গায় এই ব্যবসা করতে পারবেন।
✍️ কর্মী নিয়োগ
এই এই কাজের জন্য কমপক্ষে একজন এই কাজে দক্ষ ব্যক্তির প্রয়োজন হবে। কেননা তৈরীর পদ্ধতি যদি জানা না থাকে তাহলে কিন্তু সঠিকভাবে, কম সময়ে, কম খরচে, ভালো মানের, খুব বেশি পরিমাণে বোতল উৎপাদন করা যাবে না।
বোতল তৈরিতে বিভিন্ন কাজ করার জন্য কমপক্ষে আপনার দুই থেকে তিনজন কর্মীর প্রয়োজন হবে। তবে আপনি যদি বোতল তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে নেন এবং আপনার বাড়িতে যদি কমপক্ষে দুই থেকে তিনজন লোক থাকে, তাহলে আপনার আর কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন হবে না।
✍️ প্রয়োজনীয় লাইসেন্স
এই ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজন হবে, যেমন ট্রেড লাইসেন্স, পলিউশন সার্টিফিকেট, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ইত্যাদি।
✍️ বোতল তৈরির পদ্ধতি
প্রথম – আপনার যদি বোতল তৈরির জন্য প্লাস্টিকের কাঁচামালটি গলানো প্রস্তুত অবস্থাতেই থাকে তাহলে আপনাকে আর প্লাস্টিকের কাঁচামাল গুলিকে গলানোর প্রয়োজন নাই। সে ক্ষেত্রে সাজগুলো আপনাকে এর পূর্বেই কাঁচামাল হিসেবে কিনতে হয়। আর যদি না কিনেন তাহলে আপনাকে প্লাস্টিকগুলিকে অন্য একটি কলারে ঢেলে ছাজ তৈরি করতে হবে। যেই হলো এটিতে উচ্চ চাপের মাধ্যমে প্লাস্টিক গুলিকে গলিয়ে বোতলের জন্য ছাড় তৈরি করবে।
বোতলের ছাচ তৈরি করার সময় অর্থাৎ প্লাস্টিক গুলিকে গলিয়ে ছাজ করার সময়, আপনাকে পছন্দ অনুযায়ী রং মিশ্রণ করতে হবে। বিশেষত যেই রঙের বোতল আপনি তৈরি করতে চান।
দ্বিতীয় – এরপর তৈরি করা ছাঁচ গুলিকে ব্লো মোল্ডিং মেশিনের হোলারে দিলে ছাঁচ গুলি প্রথমে তাপের কারণে হালকা নরম হবে। এরপর মেশিনের মধ্যেই ভেতরে ফাঁপা অংশগুলিতে উচ্চ বায়ুর চাপের মাধ্যমে ফুলে গিয়ে বোতল তৈরি হয়ে যাবে।
কারণ ব্লো মোল্ডিং মেশিনটি সম্পূর্ণ অটোমেটিক একটি মেশিন। যেখানে বোতল তৈরির সম্পূর্ণ কাজ মেশিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ হয়। এরপর বোতল তৈরি হয়ে অটোমেটিক্যালি বেরিয়ে আসে।
তৃতীয় – এরপর যদি আপনি বোতলতে কোন কিছু লিখতে চান, তাহলে প্রিন্টার মেশিনের সাহায্যে এক একটি বোতলেতে আপনি সেটিকে প্রিন্ট করে নিবেন।
চতুর্থ – বোতলের ঢাকনা তৈরির জন্য আপনাকে অন্য একটি মেশিন কিনতে হবে। যেটি আপনারা অনলাইনে bottle cap making machine লিখলে বহু মেশিনের লিস্ট পেয়ে যাবেন। চাইলে ওখান থেকে কিনে নিবেন বা দোকানে গিয়েও কিনতে পারেন।
অথবা অনলাইনে বোতলের জন্য তৈরি ক্যাপ বা ঢাকনাও কিনতে পাওয়া যায়। চাইলে আপনারা বোতল অনুযায়ী তৈরি ঢাকনাও কিনতে পারেন।
পঞ্চম – এরপর আপনি যদি চান যে আপনার কোম্পানির স্টিকার বোতলগুলোতে চিপকাবেন। তাহলে আপনার কোম্পানির নামে স্টিকার তৈরি করে সেগুলিকে বোতলেতে লাগাতে পারেন।
ষষ্ঠ – এরপর বোতল গুলিকে বিক্রির জন্য প্যাকেজিং করতে হবে। এর জন্য আপনাকে অন্য একটি মেশিন কিনতে হবে বোতল প্যাকেজিং মেশিন নামে।
✍️ বিক্রির পদ্ধতি
বোতল তৈরি করার পর আপনারা এগুলিকে বিভিন্নভাবে বিক্রি করতে পারবেন। যেমন দোকানে দোকানে অর্ডার অনুযায়ী সাপ্লাই করে, ই-কমার্স কোম্পানিগুলিতে অনলাইনের মাধ্যমে। ওয়েবসাইট বানিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং করে।
✍️খরচ
এই ব্যবসা একটি মোটামুটি মাঝারি অংকের টাকার ব্যবসা। কারণ এতে যে মেশিনগুলি প্রয়োজন হয় সেগুলির মূল্য তুলনামূলক বেশি। যদি আপনি সেমি অটোমেটিক Blow Moulding Machine মিডিয়াম মানের কিনেন তাহলে তার মূল্য কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকার মতো পড়তে পারে। এবং যদি আপনি বোতলের ঢাকনা বা ক্যাপ তৈরীর মেশিন কিনেন তাহলে তার জন্য আপনার প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মত খরচ হতে পারে। সঙ্গে কাঁচামাল ও আরো অন্যান্য সরঞ্জামের টাকা আলাদা ভাবে লাগবে।
সুতরাং আপনার ব্যবসাটি শুরু করতে গেলে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার মতো খরচ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আপনার পরিশ্রমও বাঁচবে এবং কর্মীর খরচাও অনেকটা কমে যাবে। কেননা সেমি অটোমেটিক মেশিনের জন্য সমস্ত কাজই কিন্তু আপনার অটোমেটিক ভাবে প্রায় হয়ে যাবে।
:: আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে, বাজারেতে সবচেয়ে কোন টাইপের এবং কত লিটারের বোতলের চাহিদা বেশি রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য প্রতিযোগিতা তুলনায় একটু খুব মূল্য কম রেখে ভালো মানের বোতল প্রদান করতে হবে। এতে মানুষের মনে আপনার বোতল বা কোম্পানির প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়লে আপনার বিক্রি বাড়বে, আর বিক্রি বাড়লে আপনার আয় বাড়বে।