Miyazaki Mango – মিয়াজাকি আমের পুষ্টিগুণ, চাষের জন্য মাটি, আবহাওয়া, চারাগাছ কোথায় পাবেন, লাগানোর সময় ও পদ্ধতি, পরিচর্যা, বিক্রি ইত্যাদি বিস্তারিত জানুন।
প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের ফল ঋতু অনুপাতে বাজারেতে আসে এবং যাই। তার মধ্যে একটি ফল হল আম। এটি হচ্ছে ফলের রাজা। এবং গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। আম খেতে খুবই সুস্বাদু। গ্রীষ্মকালে আমের মরশুমে আম ছাড়া ভাতের কথা মনেই আসেনা। যদি আম ছাড়া আমরা ভাত খাই তাহলে সেই ভাত খাওয়াতে তেমন কোন মজায় আসেনা। তাছাড়া আম বিহীন ভাত খাওয়াতে অপেক্ষা কৃত কমও খাওয়া হয়ে থাকে।
আম আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া আম নানান পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ রয়েছে। আম থেকে নানান ধরনের দ্রব্য বর্তমানে তৈরি হচ্ছে। যেমন আম থেকে চকলেট তৈরি, আচার তৈরি, জুস তৈরি হচ্ছে। এবং এই সমস্ত খাবার দ্রব্য গুলি বাজারেতেও খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে।
আম বিভিন্ন জাতের বা বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে। আমের জাত বা প্রজাতি অনুযায়ী, আম বিভিন্ন রংয়ের, বিভিন্ন আকার-আকৃতির, বিভিন্ন সুগন্ধির ও বিভিন্ন স্বাদের হয়ে থাকে। যাইহোক বাজারে আপনারা ল্যাংড়া আম, গোপালভোগ আম, মিশ্রিদানা আম, সোনামুখী ইত্যাদি আমের কথা শুনেছেন।
উপরের ওই আম গুলি হয়তো মরশুম অনুপাতে ১০০ বা ২০০ বা ৩০০ অথবা বড়জোর ৫০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু আজকে এমন একটি আমের চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, যে আমের দাম শুনলে আপনার হয়তো চোখ কপালে উঠে যাবে। হ্যাঁ আমটির নাম হচ্ছে মিয়াজাকি আম। আন্তর্জাতিক বাজারে যে আমের মূল্য প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার অর্থাৎ আড়াই লক্ষ টাকারও বেশি । ২০২৩ মৌসুমে এই মিয়াজাকি আমের আন্তর্জাতিক সর্বাধিক মূল্য ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু দেশীয় বাজারেও এর মূল্য ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা প্রতি কেজিতে।
যাইহোক এই মিয়াজাকি আম সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
👉 মিয়াজাকি আমের উৎপত্তি ও নামকরণের কারণ
এই মিয়াজাকি আমের চাষ সর্বপ্রথম জাপানি শুরু হয়। অনুমান করা হয়েছে ১৯৫০ সালের কাছাকাছি সময় থেকে জাপানের মিয়াজাকি এলাকায় এই আমের চাষ প্রথম হয়েছিল। এবং এই শহরের বা এলাকার নাম অনুসারেই আমটির নাম মিয়াজাকি হয়েছে।
👉 মিয়াজাকি আমের পুষ্টিগুণ
মিয়াজাকি আম নানান পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ । এতে রয়েছে ভিটামিন-ই, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, কপার। এছাড়া এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ও ফোলিক অ্যাসিড । তাই এই আম নাকি ক্যান্সারের অনেকটা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এবং অন্যদিকে মাল্টিভিটামিনের মতও কাজ করে থাকে। যা হেল্থ বেনিফিটের জন্য বিশেষ উপকারী।
👉 মিয়াজাকি চাষের জন্য মাটি
এই মিয়াজাকি আমগাছ প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। এবং প্রায় সব ধরনের মাটিতেই এর ফলন কমবেশি হয়ে থাকে। তবে দোআঁশ মাটি এবং এটেল মাটি এই মিয়াজাকি আম চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। আর এই ধরনের মাটি যে কোন দেশের সর্বত্রই কমবেশি অঞ্চলে পাওয়া যায়।
👉 মিয়াজাকি আম চাষের জন্য আবহাওয়া
আম চাষ একটি গ্রীষ্মকালীন চাষ। তাই যে সমস্ত অঞ্চল রৌদ্র-উজ্জ্বল এবং গরম আবহাওয়া বিরাজ করে সেই অঞ্চলে এই মিয়াজাকি আম চাষ ভালো হয়। বছরের অর্ধেক সময়েরও বেশি শীতকাল বিরাজ করে ওই সমস্ত অঞ্চলে এই আম চাষ উপযোগী নয়। সাধারণত আম ফলনের মরশুমে যে সমস্ত অঞ্চলের তাপমাত্রা ২৮°c থেকে ৩৮°c তাপমাত্রা থাকে সেই সমস্ত অঞ্চল এই আম চাষের জন্য ভালো।
👉 মিয়াজাকি আম চারা গাছ লাগানোর সময়
পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলে বছরের যে কোন সময়ই, এই মিয়াজাকি আমের চারা গাছ লাগানো যায়। কিন্তু সবচেয়ে ভালো সময় হলো বর্ষাকাল। কারণ গাছ লাগানোর সময় যদি আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে এবং হালকা হালকা মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হয় তাহলে এই গাছ বাঁচার ও বৃদ্ধি ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তবে আমি আপনাদেরকে রেকমেন্ড করবো যেন আপনারা গ্রীষ্মকালে এই মিয়াজাকি আমের চারা গাছ না লাগান।
👉 গাছ লাগানোর পদ্ধতি
গাছের চারা গুলি লাগানোর সময়। যে জায়গাটিতে গাছটিকে লাগানো হবে সেই জায়গাটিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে উঁচু করতে হবে। কিছু কম জমিনের যে উচ্চতা তার থেকে এক ফুটের মতো। এরপর সেই উঁচু জায়গায় হালকা গর্ত করে গাছের চারা গুলিকে লাগাতে হবে। এবং যেই জায়গায় গাছের চারটে লাগানো হবে সেই জায়গার মাটিটা যেন ধুলোর মতো এবং নরম হয়। এবং প্রতিটি চারা গাছের মধ্যে দূরত্ব কিছু কম ১০ থেকে ১২ ফুট রাখতে হবে।
👉 গাছের পরিচর্যা
গাছ লাগানোর পর থেকেই দিনে কমপক্ষে একবার বিশেষত সকালবেলা অথবা সন্ধ্যেবেলা গাছের গোড়ায় হালকা করে জল দিতে হবে। গাছের ডাল যদি বিচ্ছিন্নভাবে থাকে তাহলে দু-একটা কেঁটে সাইজ করে দিতে হবে। যদি কোন পোকামাকড়ের উপদ্রব হয় তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী কীটনাশক বিষ প্রয়োগ করতে হবে।
👉 আম মুকুল ধরার সময় পরিচর্যা
আমির মুকুল সাধারণত শীত মৌসুমের শেষের দিকে ফোটে থাকে। ওই সময় প্রচুর পরিমাণে কুয়াশাও লক্ষ্য করা যায়। এই কুয়াশা আম মুকুলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এগুলি আমের মুকুলকে শুকিয়ে দেয় অর্থাৎ নষ্ট করে দেয়। তাই আম মুকুল ধরার পর প্রত্যেকদিন সকালে উঠে জলের মাধ্যমে সেগুলিকে ধুয়ে নিতে হবে। এবং প্রয়োজনে সেগুলিতে ভিটামিন এবং বিষ প্রয়োগ করতে হবে। কারণ মুকুল ধরলেই তাতে নানান পোকামাকড়ের উপদ্রব ঘটে সেই মুকুলের মধু বা রস খাওয়ার জন্য।
👉 আম বড় ও পাকার সময় পরিচর্যা
আম যখন বড় আকার ধারণ করবে তখন আমের ভারে ডালগুলো ঝুঁকে মাটিতে আম ছুঁয়ে যেতে পারে। এর ফলে আম গুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই যখনই ডালগুলো হালকা জুকারভাব নেবে তখনই আপনাকে বাস বা অন্য কিছু দিয়ে ডালগুলিকে ঠেক দিতে হবে। ধ্যান রাখবেন যেন আমড়ার গুলি একে অপরের সঙ্গে অপরটি যেন জড়িয়ে না যায়। ডালগুলো যেন মোটামুটি ফাঁকা থাকে, কেননা সূর্যের আলো যত বেশি লাগবে এই আমের সৌন্দর্য এবং স্বাদ তত বেশি হবে।
আমি যখন পেকে যাবে তখন তার রং পুরো লাল টকটকে হয়ে যাবে। সূর্যের দিকে তাকালে যেরকম রং মনে হয় , তেমনি আন্টি পাকা অবস্থায় ওই রকম রং এরই মনে হয়। আম পেকে গেলে সেগুলিকে কিছুটা বদ শুদ্ধ নিয়ে আম গুলি কি কেটে নিতে হবে। এরপর সেগুলিকে জলের মাধ্যমে ভালোভাবে ধুয়ে বিক্রির জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
👉 মীয়াজাকি আম প্যাকিং ও বিক্রি পদ্ধতি
আপনি যদি নিজের পার্শ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করতে চান তাহলে আপনি সেগুলিকে একটি ব্যাগ অথবা গামলার মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে পারেন। আর যদি আপনি আম গুলি কি জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির জন্য রপ্তানি করতে চান। তাহলে আপনি ছোট ছোট বাক্স তৈরি করে নিবেন অর্ডার দিয়ে, সেই সঙ্গে কিছু তুলো কিনে নিবেন। এরপর তুলো গুলো কি বাকসের নিচে দিয়ে আমগুলিকে তার ওপরে রেখে সেই আমের উপরেও হালকা তুলো দিয়ে আমের বাক্স গুলিকে ত্যাগ করে নিবেন। ইতি আম এত সহজে নষ্ট হবে না এবং খুব ভালো থাকবে।
এরপর সেগুলি আপনি ডিগ্রির জন্য রপ্তানি করতে পারেন। বা চাইলে আপনি বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানিগুলোতেও আমগুলি অনলাইনে বিক্রি করার জন্য এপ্লাই করতে পারেন।
👉 মিয়াজাকি আম চারাগাছ কোথায় পাবেন
এই চারা গাছ আপনারা বিভিন্নভাবে পেতে পারেন। যেমন, চারা গাছ নার্সারি থেকে এই মিয়াজাকি চারা গাছ পেতে পারেন। বা যারা বড় বড় আমের চাষী এবং এই মিয়াজাকি আমের চাষ করেন তাদের কাছ থেকেও আপনি চারা গাছ পেয়ে যাবেন। বা চাইলে আপনি সরকারি কৃষি দপ্তর থেকেও এই চারা গাছ পেতে পারেন। অথবা বর্তমানে অনলাইনেও বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকেই এই মিয়াজাকি আমের চারা গাছ পাওয়া যাচ্ছে, চাইলে আপনি অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন।
👉 কি কি বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন
- এই মিয়াজাকি আম চাষের জন্য জমি বা জায়গাটি যেন খুব বেশি গর্ত না হয়।
- জমিনেতে বা নিয়া যা কি আম গাছের গোড়ায় সব সময় যাতে জল জমে না থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা।
- বর্ষার রীতিতে যখন একটানা বৃষ্টি শুরু হবে সেই সময় মিয়াজাকি আম চারা লাগানো।
- মিয়াজাকি গাছ এবং আমগুলোতে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
- দিনে একটাবার হালকা করে গাছের গোড়ায় জল দেওয়া।
- যদি মিয়াজাকি আম গাছগুলোতে সময় হয়ে গেলেও মুকুল না ধরে তাহলে আপনাকে দোকান থেকে ভিটামিন কিনে স্প্রে করতে হবে।
- বিক্রি করার আগে মিয়াজাকি আমের মূল্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে যাচাই করা।
- আমগুলি যাতে যে কোন অবস্থাতেই আঘাত প্রাপ্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।