অ্যালোভেরা চাষ – এর জন্য জমি, আবহাওয়া , বীজ , চাষের পদ্ধতি , কাটার সময় , খরচ , বিক্রি এবং লাভ ইত্যাদি
করোনা সংকটের পর থেকে দেশে ও বিশ্বে আয়ুর্বেদিক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি একটি প্রসাধনী পণ্য ( alovera gel ) বা আয়ুর্বেদিক ওষুধই হোক না কেন, অ্যালোভেরা এই সবগুলিতে প্রচুর ব্যবহার ( aloe vera uses ) করা হয়। এ কারণেই বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি।
অ্যালোভেরা চাষের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হল আপনি মাত্র একবার গাছ লাগিয়ে ৫ বছরের জন্য এটি থেকে লাভ ( aloe vera benefits ) করতে পারেন। যদি আমরা অ্যালোভেরা চাষের কথা বলি, তাহলে প্রায় ৫০,০০০ টাকা খরচ করে আপনি বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। একটি অ্যালোভেরা গাছ লাগালে তা থেকে তিন বা চারটি ছোটো গাছ বের হয়।
আপনার ক্ষেতে অন্য জায়গায় এই ছোটো চারা গুলি রোপণ করে এর থেকেও ভাল উপার্জন করতে পারবেন । এর বীজ আপনারা ভারত বা বাংলাদেশের কৃষি দপ্তর বা যেকোনো ধরনের বড় বীজ দোকানে অবশ্যই পেয়ে যাবেন।
👉অ্যালোভেরা কি
ঘৃতকুমারী বা এলোভেরা লিলিসিয়া পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ যা বহু বছর ধরে বেঁচে থাকে। অ্যালোভেরা মূলত ফ্লোরিডা, মধ্য আমেরিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং এশিয়া মহাদেশের কিছু দেশের উদ্ভিদ । অ্যালোভেরা বিদেশ থেকে ভারত ও বাংলাদেশে এসেছে, তবে পরে এটি দেশের শুষ্ক অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেছে। অ্যালোভেরার কান্ড ছোট, পাতা সবুজ ও মাংসল।
অ্যালোভেরার পাতা থেকে হলুদ রঙের তরল বের হয়। এটি একটি ঔষধি গাছ । আয়ুর্বেদ অনুসারে চর্মরোগ, জন্ডিস, কাশি, জ্বর, পাথরি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রোগে অ্যালোভেরা খুবই উপকারী ( Aloe Vera benefits) । এছাড়া এলোভেরার জেল ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী ( aloe vera hair benefits )।
👉 অ্যালোভেরার প্রকারভেদ
বছরের পর বছর গবেষণার পর দেখা গেছে ৩০০ ধরনের অ্যালোভেরা রয়েছে। বর্তমানে IC111271, IC111269 এবং AL-1 হাইব্রিড প্রজাতির অ্যালোভেরা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে জন্মানো যায়।
👉 কখন ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছ লাগাতে হয়
ভালো ফলনের জন্য জুলাই-আগস্ট মাসে ঘৃতকুমারী গাছ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। শীতের মাস ছাড়া সারা বছরই অ্যালোভেরা চাষ করা যায়।
👉 কখন এবং কিভাবে অ্যালোভেরা চাষ করবেন এর জন্য জলবায়ু এবং জমি
ঘৃতকুমারী চাষের ( alovera farming ) জন্য উষ্ণ আবহাওয়া ভালো। এটি সাধারণত ন্যূনতম বৃষ্টিপাত সহ শুষ্ক এলাকায় এবং উষ্ণ আর্দ্র এলাকায় সফলভাবে চাষ করা হয়। এই উদ্ভিদ চরম ঠান্ডা অবস্থার জন্য খুব সংবেদনশীল। এর জন্য মাটি বা জমির কথা বললে, বেলে থেকে দোআঁশ মাটি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মাটিতে এর চাষ করা যায়। এর জন্য বেলে মাটি সবচেয়ে ভালো।
এছাড়া ভালো কালো মাটিতেও এর চাষ করা যায়। জমি নির্বাচন করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে চাষের জন্য জমি এমন হওয়া উচিত যাতে মাটির স্তর সামান্য উচ্চতায় থাকে এবং জমিতে পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে কারণ এতে পানি যেন স্থির না থাকে। এর মাটির pH মান ৮.৫ হওয়া উচিত।
👉 অ্যালোভেরা চাষের জন্য জমি তৈরি
অ্যালোভেরা চাষের জন্য প্রথমে জমি নাঙ্গল করতে হবে। জমির উর্বরতা বাড়াতে শেষ চাষের বা নাঙ্গলের সময় ১৫-২০ টন গোবর বা যথেষ্ট পরিমাণে জৈব সার দিতে হবে। গোবরের বা জৈব সারের পরিমাণ যত বেশি হবে ফলন তত ভালো হবে ।
👉 বীজ রোপণের পরিমাণ
এটি ৫-৭ চারা যুক্ত বপন করা উচিত। এক একর জমিতে ৫০০০-১০০০০ রোপণের প্রয়োজন হতে পারে। চারার সংখ্যা মাটির উর্বরতা এবং উদ্ভিদ থেকে গাছের দূরত্ব এবং সারি থেকে সারির দূরত্বের উপর নির্ভর করে।
👉 অ্যালোভেরার বীজ কোথায় পাওয়া যায়
অ্যালোইন এবং জেল উৎপাদনের জন্য ন্যাশনাল ব্যুরো অফ প্ল্যান্ট জেনেটিক সোর্স দ্বারা অ্যালোভেরার বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আপনারা ভারত বা বাংলাদেশ যেখানেই থাকুন না কেন আপনারা নিকটস্থ ভারতীয় কৃষি দপ্তর বা বাংলাদেশ কৃষি দপ্তরে গিয়ে খোঁজ করলে সেখান থেকে আপনাকে অবশ্যই তথ্য পেয়ে যেতে পারেন।
বা আপনার নিকটস্থ শহরতলীতে যেখানেতে বিভিন্ন ধরনের বীজ বিক্রি হয় সেই সমস্ত বড়ো দোকানগুলিতে অ্যালোভেরার বীজ খোঁজ করলেও অবশ্যই পেয়ে যাবেন। অ্যালোভেরার বাণিজ্যিক চাষের ( small business ideas ) জন্য, নতুন কৃষকরা নতুন আলোভেরার জাতের জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যালোভেরা প্রজাতি তৈরীর প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
👉 কিভাবে অ্যালোভেরা চারা লাগানো হয়?
ঘৃতকুমারী ( alo vera ) গাছ লাগানোর জন্য মাঠে ভেলি বা হালকা উচুঁ সরু লাইন তৈরি করা হয়। এক মিটারে দুটি লাইন করা হয়। তারপর এক মিটার জায়গা খালি রেখে এক মিটারে দুটি লাইন বসাতে হবে। পুরানো গাছ থেকে ছোট গাছগুলো তুলে ফেলার পর গাছের চারপাশের মাটি ভালোভাবে চেপে দিতে হবে।
বৃষ্টিতে ফলে বেশি পরিমাণে ক্ষেতের পুরানো গাছ থেকে কিছু ছোট গাছ বের হতে থাকে, সেগুলোকে মূলসহ বের করে জমিতে রোপণের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যালোভেরার রোপণের ঘনত্ব প্রতি হেক্টরে ৫০,০০০ হওয়া উচিত এবং ব্যবধান ৪০ থেকে ৪৫ সেমি হওয়া উচিত।
👉 আলোবেরা চাষের জন্য জল ও যত্ন ?
অ্যালোভেরা ( alovera ) চাষে জল খুব কম লাগে তাই এটি সহজে বৃদ্ধি পায়। অ্যালোভেরা গাছে খুব বেশি জলের প্রয়োজন হয় না। অতিরিক্ত পানির কারণে এর শিকড় পচে যায় এবং গাছ মারা যায়। তাই সেচের ক্ষেত্রে এই জিনিসটি মাথায় রাখতে হবে। স্বাভাবিক ঋতুতে সপ্তাহে একবার এবং শীতকালে এর চেয়ে কম জল দেওয়া ভাল।
👉 প্রথম অ্যালোবেরা কাটার জন্য কখন প্রস্তুত হবে ?
প্রথম ফসল এক বছর পরে কাটার জন্য প্রস্তুত হয়, তারপর থেকে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কাটা যেতে পারে। ফসল কাটার জন্য একটি ধারালো কাস্তে বা ছুরি ব্যবহার করতে হবে।
👉 অ্যালোভেরা চাষের খরচ কত?
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (ICAR) অনুসারে, এক হেক্টরে গাছ লাগানোর খরচ প্রায় ২৭,৫০০ টাকা হতে পারে। যেখানে, মজুরি, খামার তৈরি, সার ইত্যাদি যোগ করার পরে, এই ব্যয় প্রথম বছরে ৫০,০০০ টাকায় পৌঁছে যেতে পারে।
👉 অ্যালোভেরা থেকে আয় ( Aloe Vera benefits ) ?
এক হেক্টর জমিতে অ্যালোভেরা চাষ থেকে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ টন পুরু পাতা পাওয়া যায়। এটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ ( aloe vera juice benefits ) এবং প্রসাধনী প্রস্তুতকারকদের ( aloe vera gel )কাছে বিক্রি করা যেতে পারে। বা আপনি নিজে অ্যালোভেরা জেল প্রস্তুত করে বিক্রি (Aloe Vera gel price ) করতে পারেন ।
এই পাতা থেকে অ্যালো বা অ্যালোভেরাও বিক্রি করা যায়। দেশের বিভিন্ন কৃষি সমিতি বা মান্ডিতে এর মোটা পাতার দাম টন প্রতি ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা। সেই অনুযায়ী, আপনি যদি আপনার ফসল বিক্রি করেন, তাহলে আপনি সহজেই ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় ( Aloe Vera benefits ) করতে পারেন। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে পাতা হয় ৬০ টন পর্যন্ত। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম বছরে উৎপাদন প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে যায়।
:: অ্যালোভেরার উপকারিতার ( Aloe Vera benefits ) কথা মাথায় রেখে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা অ্যালোভেরা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে জানতে পারলেন। অ্যালোভেরা চাষ সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে তো আপনারা রিসার্চ করতে পারেন বা নিচে কমেন্ট করতে পারেন।
এছাড়া এই ওয়েবসাইটে আপনারা ছোট ব্যবসার আইডিয়া ( small business ideas ), বাড়িতে ব্যবসার আইডিয়া ( Business ideas at home ) সুতরাং বিভিন্ন ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে প্রতিনিয়ত তথ্য পেয়ে যাবেন।