pollution certificate – ভারতে পলিউশন সার্টিফিকেট তৈরির পদ্ধতি, আবেদন পদ্ধতি, কি কি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন জানুন বিস্তারিত।
ব্যবসা করতে হলে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হয়। যার মধ্যে একটি হলো ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স বা ডকুমেন্টস গুলি করা। এই ডকুমেন্টস গুলির মধ্যে একটি হলো পলিউশন সার্টিফিকেট।
আপনারা আপনার যদি কোন বাইক অথবা চার চাকার গাড়ি থেকে থাকে বা আরো বেশি চাকার গাড়ি থেকে থাকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই এগুলির জন্য পলিউশন সার্টিফিকেট তৈরি করতে হয়েছে। কারণ যে কোনো গাড়ির দ্বারা যে ধোয়া পরিবেশে মেসে তার দ্বারা পরিবেশ দূষণ ঘটে, তাই আপনাকে এ ধরনের সার্টিফিকেট নিতে হয়ে থাকে। যে আমার এই গাড়ির দ্বারা এতটা পরিমাণে ধো ওয়া পরিবেশেতে নিয়ে এসেছে এবং এর দ্বারা কিছুটা হলে পরিবেশ দূষণ ঘটছে।
যাই হোক পলিউশন সার্টিফিকেট হল এমন এক ধরনের লাইসেন্স যার দ্বারা বোঝাবে আপনার ব্যবসার দ্বারা পরিবেশের তেমন দূষণ ঘটছে না, যদিও ব্যতিক্রমে ঘটে থাকে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকবে।
যেমন আপনি যদি কোন ব্যবসার জন্য যেকোনো ধরনের মেশিন স্থাপন করেন না কেন, সেই মেশিনগুলোর দ্বারা যথেষ্ট পরিমাণে ধোয়া পরিবেশে মিশে থাকে। তাই সেই ধোঁয়াগুলিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে শোধন করে যদি পরিবেশের মধ্যে ছাড়া হয় তাহলে পরিবেশ দূষণ অনেকটা মাত্রায় কমানো যাবে। সেই জন্যই এই pollution certificate নেওয়া, যে আপনি এগুলির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
ধোঁয়া ছাড়াও কল কারখানার অনেক বজ্র পদার্থ ও দূষিত জলও যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে সেগুলির মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণে পরিবেশ দূষণ ঘটে থাকে। তাই ওই সমস্ত দূষিত পদার্থ ও জল গুলি কি যাতে শোধন করে যথাযোগ্য জায়গায় ফেলা যায় তাহলে এই পরিবেশ দূষণ অনেকটা পরিমাণে কম ঘটবে। সেই জন্যই সরকারের কাছ থেকে এই পলিউশন সার্টিফিকেট নিতে হয়।
এর মাধ্যমে সরকারের কাছে আপনি আবদ্ধ হলেন যে আপনার এই ব্যবসার দ্বারা, এই পরিমাণ বজ্র পদার্থ, দূষিত জল বা ধোয়া উৎপন্ন হবে। এবং এগুলিকে শোধন করে পরিবেশের মধ্যে ছাড়া হবে।
তবে আপনি যদি এই পলিউশন সার্টিফিকেট না তৈরি করেই কল কারখানা স্থাপন করেন, অথবা আপনার এই ব্যবসার দ্বারা যদি পরিবেশের কোন দূষণ ঘটে তাহলে সর্বনিম্ন ১০০০০ টাকা থেকে ৫০০০০ বা ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তো চলুন নিচে এই পলিউশন সার্টিফিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
👉 লাইসেন্সের ক্যাটাগরি (pollution certificate Category)
বিশেষত পলিউশন সার্টিফিকেট চার ধরনের হয়ে থাকে। যেমন – Red Category, Orange Category, Green Category, White Category এইসব ধরনের। ব্যবসার ধরন এবং দূষণের মাত্রা অনুযায়ী এই সমস্ত পলিউশন সার্টিফিকেটগুলিকে প্রদান করা হয়ে থাকে ব্যাবসাকারিদেরকে।
রেড বিভাগ ( Red Category ) – সে সমস্ত শিল্প বা ব্যবসা গুলি অত্যাধিক পরিমাণে দূষণ ঘটাতে পারে , অর্থাৎ যাদের দূষণের সূচক ৬০ বা তার বেশি, বিশেষত তাদের জন্যই এই রেড ক্যাটাগরির সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। যেমন রাসায়নিক শিল্প, বড় বড় হোটেল ও কলকারখানা।
কমলা বিভাগ ( Orange Category ) – যে সমস্ত শিল্প বা ব্যবসা গুলি রেড ক্যাটাগরির তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম দূষণ ঘটায়, অর্থাৎ যাদের দূষণের সূচক ৪১ থেকে ৫৯ তারা এই কমলা ক্যাটাগরির মধ্য পড়ে। এবং তাদেরকে অরেঞ্জ ক্যাটাগরির পলিউশন সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। যেমন বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি ও সার্ভিসিং কোম্পানি।
সবুজ বিভাগ ( Green Category ) – যে সমস্ত শিল্প বা ব্যবসা গুলি কমলা বিভাগের তুলনায় কম দূষণ ঘটিয়ে থাকে, বিশেষত যে সমস্ত ব্যবসার বা শিল্পের দূষণের সূচক ২১ থেকে ৪০ এর মধ্যে থাকে। তারা এই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে এবং সেই সমস্ত ব্যবসা ও শিল্প গুলিকে গ্রীন ক্যাটাগরির দূষণ মূলক সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
সাদা বিভাগ ( White Category ) – যে সমস্ত ব্যবসা বা শিল্পগুলি ওপরের সমস্ত ক্যাটাগরির তুলনায় অপেক্ষাকৃতভাবে কম দূষণ ঘটিয়ে থাকে। অর্থাৎ যাদের দূষণের মাত্রা ০ থেকে ২০ এর মধ্যে থাকে, সেই সমস্ত ব্যবসাগুলি এই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে।
👉 আবেদের জন্য কি কি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন
puc certificate এর জন্য যে সমস্ত কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট গুলির প্রয়োজন হতে পারে সেগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
- যে জায়গায় শিল্প বা ব্যবসাটি শুরু হবে, সেই জায়গার মালিকানার প্রমাণপত্র। যদি ভাড়াটে বা লিজে নেওয়া হয় তাহলে তার সংশাপত্র।
- জায়গাটির ছবিসহ অ্যাড্রেসের একটি শংসাপত্র।
- ট্রেড লাইসেন্স সার্টিফিকেট
- GST বা VAT ডিটেলস
- দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের শংসাপত্র। যেমন – জল শোধনাগার বা ধোয়া শোধনাগার বা বজ্র পদার্থ শোধনাগার থেকে পাওয়া শংসাপত্র।
- ব্যবসার স্থানীয় এলাকা থেকে পাওয়া ব্যক্তিগণ এদের ছাড়পত্র।
- ব্যাবসার জন্য Pan Card ডিটেলস।
- কিসের ব্যবসা এবং ব্যবসার জন্য কি কি উপাদান ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলির ডিটেলস পত্র।
- ব্যবসা দারগণের ফটোকপি সহ পরিচয় পত্র। যদি অংশীদারী হয়ে থাকে তাহলে সকলেরই ফটোকপি সহ ডিটেলস গুলি লাগবে।
👉 পলিউশন সার্টিফিকেট পাওয়ার পদ্ধতি
CTE (Consent To Establish ) বা প্রতিষ্ঠার জন্য সম্মতি – যেকোনো ইন্ডাস্ট্রি বা প্রতিষ্ঠা চালু করার আগে জল এবং বায়ু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ইন্ডাস্ট্রি বা ব্যবসাটি শুরু করার জন্য পারমিশন নিতে হবে। এই পারমিশন বা সম্মতি ৩ বছর বা ৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত প্রদান করা হয়ে থাকে।
CTO (Consent To Operate) বা পরিচালনার জন্য সম্মতি – এটির ক্ষেত্রেও ব্যবসা শুরু করার আগে বায়ু এবং জল দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী ব্যবসাদার দিগকে অনুমতি নিতে হবে। রেড বিভাগের জন্য ৫ বছরের, অরেঞ্জ বিভাগের জন্য ১০ বছরের, এবং সবুজ বিভাগের জন্য ১৫ বছর কাজ করার অনুমতি প্রদান করা হয়।
SBPC (State Pollution Control Board) বা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড – এরপর আপনাকে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের মাধ্যমে NOC নিতে হবে। এর জন্য এর অধীনে যারা কাজ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং পরামর্শ নিতে হবে। এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দিয়ে আবেদন করতে হবে। NOC পেয়ে গেলে আপনি বিল্ডিং করার কাজ করতে পারেন।
উপরিউক্ত সার্টিফিকেট গুলি পাওয়ার জন্য, আপনি চাইলে আপনার নিজস্ব জেলার জেলা প্রশাসক বা কালেক্টরেট অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ডকুমেন্টস দিয়ে আবেদন করতে পারেন। অথবা SBPC অর্থাৎ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন।
আপনি অনলাইনে এপ্লাই করার জন্য সার্চ করবেন রাজ্যের নামের সঙ্গে। যেমন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে pcb for west bengal , আসামের ক্ষেত্রে pcb for Assam , তাহলে আপনারা Pollution Control Board নামে সরকারি অফিসিয়াল ওই রাজ্যের সাইট পেয়ে যাবেন। সাইটে প্রবেশ করে যে সমস্ত তথ্য গুলি চাইবে, প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি দিয়ে ফর্মটিকে পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। আর বিভিন্ন পলিউশন সার্টিফিকেট এর জন্য বিভিন্ন ধরনের ফিস লাগতে পারে।
ফর্ম সাবমিট করার পর রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের অধীনে যে সমস্ত অফিসাররা কাজ করেন, তারা আপনার আবেদনটিকে যাচাই করবে। যদি পূরণ করার তথ্যের ভিত্তিতে সমস্ত তথ্য সঠিক এবং প্রয়োজনীয় স্থানের জন্য যে বিভাগের pollution certificate এর জন্য আবেদন করছেন তা যদি গ্রহণযোগ্য মনে হয়, তাহলে আপনার করা আবেদনটিকে অ্যাপ্রুভ করে দেবে। এবং আপনি যে বিভাগের সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করছেন তা পেয়ে যাবেন।
তবে আবেদন করার সময় অবশ্যই মনে রাখবেন। যে স্থানের জন্য যে বিভাগের পলিউশন সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করছেন, সেই এলাকাটি যেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা হয়ে থাকে। না হলে হয়তো আপনার আবেদনটি কেনসিল করে দিতে পারে।
বি:দ্র: – অবশ্যই মনে রাখবেন এটি কোন আইনি পরামর্শ নয়। শুধুমাত্র জানা এবং বোঝার জন্য উপরের তথ্যগুলি দেওয়া হয়েছে। যেকোনো ধরনের pollution certificate তৈরি করতে। এই বিষয়ে একজন এক্সপার্ট ব্যক্তির সঙ্গে অবশ্যই আলোচনা করে নিবেন।