Re-Selling business – রিসেলিং কি, এর সুবিধা, কিভাবে শুরু করবেন, কিছু রিসেলিং প্ল্যাটফর্ম, লাভ ও খরচ জানুন বিস্তারিত।
আপনি বিনিয়োগ ছাড়া ব্যবসা করতে চান। তাহলে অনলাইন রিসেলিং ব্যবসা ( Re-Selling business ) আপনার জন্য ভালো হতে পারে। এই পোস্টে আপনি রিসেলিং ব্যবসা কি এবং এটি কিভাবে শুরু করে ইনকাম করবেন তা জানতে পারবেন।
আজকাল ঘরে বসেই অনলাইনে রিসেলিং ব্যবসা করা যায়। অনেকে ঘরে বসেই এই ব্যবসা থেকে অনেক টাকা আয় করছেন। রিসেলিং ব্যবসা চাইলে প্রায় সবাই করতে পারে। সাধারণত বিবাহিত মহিলা, পুরুষ এবং ছাত্র-ছাত্রী সকলেই করতে পারেন। আপনি অনলাইন এবং অফলাইন উভয়ই ভাবে রিসেলিং ব্যবসা করতে পারেন।
অফলাইন রিসেলিং ব্যবসা করতে কিছু বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু অনলাইন রিসেলিং ব্যবসায় বিনিয়োগ ছাড়া টাকা ইনকাম করা যায়। তাই আপনিও যদি রিসেলিং ব্যবসা শুরু করতে চান, তাহলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
👉 রিসেলিং ব্যবসা কি?
রিসেলিং বা ReSelling দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। প্রথমটি হল Re এবং দ্বিতীয়টি হল Selling। Re মানে আবার বা পুনরায় এবং Selling মানে বিক্রি করা। রিসেলিং এর পূর্ণ অর্থ আবার বিক্রি করা বা পুনরায় বিক্রি করা।
কম দামে পণ্য ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি ( buy and selling business ) করাকে রিসেলিং বলে। এই ব্যবসা অনেক আগে থেকেই চলছে। মনে থাকবে যে আগে বা এখনও হকাররা বাড়িতে বাড়িতে আসে, যারা গ্রামে-গঞ্জে অলিতে-গলিতে এবং দ্বারে দ্বারে গিয়ে পণ্য বিক্রি করে।
এই লোকেরা সাধারণত শহর বা কারখানা থেকে সস্তায় জিনিসপত্র ক্রয় করে এবং একই জিনিসে তাদের লাভের পরিমাণ যোগ করে আবার বিক্রি করে, এটিই রিসেলিং । এর পাশাপাশি এটি অনেক পরিশ্রমমূলক কাজ। কারণ এসব মানুষকে সারাদিন মাথায় করে জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতে হতো। কিন্তু আজ আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে একই কাজ করতে পারবেন। আপনাকে কোথাও যেতে হবে না।
👉 রিসেলিং ব্যবসার সুবিধা
- আপনি পার্ট টাইম হিসেবেও এই রিসেলিং ব্যবসা করতে পারেন যে কোনো সময়।
- আপনি বিনা খরচে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
- আপনি একাধিক জিনিসপত্রের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
- আপনি নিজের মত করে লভ্যাংশ অ্যাড করতে পারেন।
- এর জন্য আপনাকে ডেলিভারি করতে হবে না । ক্রেতার অ্যাড্রেস দিলেই ডেলিভারি ব্যাক্তি এসে ওই অ্যাড্রেস ডেলিভারি করে দিবে।
- এই ব্যাবসা আপনি বাড়িতে বসেই করতে পারেন। কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নাই।
- অফিসের ও বসের কোনো চাপ থাকে না। নিজের মত করে করতে পারেন
👉 রিসেলিং এর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান
রিসেলিং ব্যাবসার ( Re-Selling business ) জন্য শুধুমাত্র আপনার ইন্টারনেট সংযোগ সহ স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ থাকতে হবে। এছাড়া একটি মোবাইল নম্বর, ইমেল এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট যেমন- হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইত্যাদি থাকা দরকার। না থাকলে আপনি অ্যাকাউন্ট গুলি ক্রিয়েট করে নিতে পারেন।
👉 কিভাবে অনলাইন রিসেলিং ব্যবসা শুরু করবেন
আমি আগেই বলেছি যে অনলাইন রিসেলিং বিজনেস করতে কোন প্রকার টাকা খরচের প্রয়োজন হয় না। অনলাইন রিসেলিং ব্যবসা ( Re-Selling business ) কয়েকটি অর্থাৎ ৫ টি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
প্রথম ধাপ – এটি হলো রিসেলিং একাউন্ট তৈরির ধাপ। এই ধাপে বিভিন্ন রিসেলিং প্ল্যাটফর্ম গুলিতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ইনফরমেশন দিয়ে প্রথমে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ – এটি হলো পণ্য বা জিনিসপত্র চয়নের ধাপ । সেই সমস্ত জিনিসপত্র গুলি চয়ন করতে হবে যে জিনিসপত্র গুলি সস্তা এবং ভাল, যা মানুষ কিনতে পারে। তবে মানুষ সহজে সস্তায় কিনতে পারে এমন পণ্য বা জিনিসপত্র মোটেই চয়ন করবেন না।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি 250 টাকায় একটি জিনিসপত্র রিসেলিং করতে চান। কিন্তু সেই জিনিসপত্রটি সব দোকানে মাত্র 200 টাকায় পাওয়া যায়। তাহলে সে কেন আপনার কাছ থেকে কিনবে? এটা সবসময় মাথায় রাখবেন। তাই এমন জিনিসপত্র বেছে নিন। যা দেখে লোকজন কিনতে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। অর্থাৎ অতি প্রয়োজনীয় কিন্তু সহজে পাওয়া যায় না এমন সমস্ত পণ্য।
তৃতীয় ধাপ – রিশেলিং ব্যাবসায় এই ধাপটি হল লাভ মার্জিন যোগের ধাপ, অর্থাৎ জিনিসপত্র চয়ন করার পর জিনিসপত্রটির যে অরিজিনাল দাম, অর্থাৎ যে দামে পাইকারি হিসেবে বা জিনিসপত্র তৈরীর কারখানায় যে দাম থাকবে সেই দামের সঙ্গে আপনার লাভ মার্জিন যোগ করতে হবে।
যেমনটা আপনারা দোকানদারের কথা ধরুন তারা প্রডাক্ট বা পণ্য কিনে নিয়ে আসে এবং গ্রাহকদেরকে বিক্রি করার সময় তারা তাদের লাভ মার্জিন যোগ করে সেই পণ্যকে বিক্রি করে, এইভাবে আপনাকেও রিসেটিং করা পণ্যে লাভ মার্জিন যোগ করতে হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন যথাসম্ভব লাভ মার্জিন কম রাখার চেষ্টা করবেন। এবং লাভ মার্জিন যেন সচরাচ র বাজারে পাওয়া পণ্যটির দামের চেয়ে বেশি যেন না হয়।
কিভাবে যোগ করবেন, উদাহরণস্বরূপ ধরুন একটি পণ্যের দাম ২০০ টাকা। তারপর আপনাকে আপনার লাভ মার্জিন ৫০ টাকা বা আপনার পছন্দ অনুযায়ী লাভ মার্জিন যোগ করতে হবে, অর্থাৎ ২০০+ ৫০( লাভ মার্জিন ) = ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারেন। এইভাবে লাভ মার্জিন সেট করে। তবে পূর্বেই বলেছি প্রোডাক্টের দাম অনুযায়ী লাভ মার্জিন সেট করবেন।
চতুর্থ ধাপ – এইটি হলো শেয়ারিং এর ধাপ, অর্থাৎ পন চয়ন করে পণ্য কেনার লিংক বা পণ্যের দাম সহ ছবি ব্লগ, ওয়েবসাইট বা বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিতে শেয়ার করা। যাতে করে আপনার রিসেলিং প্রোডাক্ট বা পণ্যটি বেশি বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়।
পঞ্চম ধাপ – আপনি যখন ছবি শেয়ার করেন। এবং যদি কেউ পণ্যটি পছন্দ করেন। তারপর তিনি আপনার সাথে যোগাযোগ করবেন এবং পণ্য কেনার বিষয়ে কথা বলবেন। তারপর আপনাকে আপনার লাভ যোগ করে পণ্যের দাম বলতে হবে।
এর পরে, ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে, সেই পণ্যটি তার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে হবে। অ্যামাজন এবং ফ্লিপকার্টে যেভাবে পণ্য অর্ডার করা হয়। একইভাবে, এটিতেও অর্ডার করতে হবে। এতে আপনার ঠিকানার পরিবর্তে যে ব্যক্তি কিনবেন তার ঠিকানায় অর্ডার করতে হবে। রিসেলিং প্ল্যাটফর্ম গুলিতে লাভ মার্জিন যোগ করে অর্ডার করা হয়।
ষষ্ঠ ধাপ – এই ধাপ হল লাভ মার্জিন পাওয়ার ধাপ অর্থাৎ ইনকামের ধাপ। যখন পণ্যটি অর্ডার অনুযায়ী ওই ব্যক্তির কাছে পৌঁছে যাবে এবং প্রোডাক্ট বা পণ্যটি নিয়ে তিনি পেমেন্ট করে দেবেন, তখন পণ্যটিতে যে লাভ মার্জিন আপনি যোগ করেছিলেন সেই লাভ মার্জিন আপনার ওই রিসেলিং একাউন্টে যোগ হয়ে যাবে। ওইখান থেকে আপনি টাকা ব্যাংকে উইথড্র করতে পারবেন।
👉 কয়েকটি ReSelling প্লাটফ্রম
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের রেসলিং প্লাটফর্ম অর্থাৎ এপ্লিকেশন বা ওয়েবসাইট রয়েছে। কিছু কিছু রিসেলিং প্ল্যাটফর্ম প্রায় সমস্ত দেশের জন্য কার্যকর অর্থাৎ ওয়ার্কেবেল । আবার কিছু কিছু রিসেলিং প্ল্যাটফর্ম প্রায় একটি বা দুটি দেশের জন্য কার্যকর অর্থাৎ ওয়ার্কেবেল।
ভারতে ReSelling প্লাটফ্রম – Spotify, Amazon Seller Marketplace, Facebook Marketplace, EarnKaro , Meesho, Glowroad, eBay, Mercari, OLX, Quikr, Flipkart, letgo ebay, ইত্যাদি।
বাংলাদেশে ReSelling প্লাটফ্রম – Spotify, Daraz, Bikroy, Pickaboo, AjkerDeal, Cellbazaar, buyomo, circle, shopup, bbazar reseller, uddom, Facebook Marketplace ইত্যাদি।
প্রায় সমস্ত দেশের জন্য কার্যকর – Spotify, ebay, ebay, Etsy, Bonanza, Facebook Marketplace ইত্যাদি।
👉 ReSelling এ খরচ ও লাভ
খরচ – রিসেলিং ব্যবসায় ( Re-Selling business ) আপনার এক টাকাও খরচা হবে না। যদি আপনার কাছে ইন্টারনেট সংযুক্ত একটি মোবাইল অথবা ল্যাপটপ থাকে। কেননা রিসেলিং প্ল্যাটফর্ম গুলিতে ফ্রিতেই অ্যাকাউন্ট তৈরি করা যায় এবং প্রোডাক্টগুলি কে রিসেল করা যায়। আপনি চাইলেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন whatsapp, facebook, twitter, instagram এ একাউন্ট তৈরি করে প্রোডাক্ট এর ছবি এবং লিঙ্ক শেয়ার করে ফ্রীতে প্রমোট করতে পারেন।
তবে আপনি চাইলে আপনার প্রোডাক্টগুলি কে google এডওয়ার্ড বা অন্যান্য অ্যাড প্ল্যাটফর্ম এর সাহায্যে অ্যাড করিয়ে বেশি লোকেদের কাছে পৌঁছাতে পারেন। কেননা যত বেশি লোকের কাছে পৌঁছাবে তত বেশি বিক্রি হবে, এবং আপনার তত বেশি আই হবে।
তাছাড়া আপনি চাইলে কিছু টাকা লাগিয়ে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন এবং সেখানে আপনার প্রোডাক্টগুলিকে লিস্ট করতে পারেন। চাইলে আপনারা ব্লগার প্ল্যাটফর্মে ফ্রিতেও ব্লক বা ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন।
লাভ – রিসেলিং ব্যবসায় লাভ নির্ভর করবে আপনি কত বেশি প্রোডাক্ট সেল করছেন এবং লাভ মার্জিন কতটা পরিমাণে রেখেছেন। যদি আপনার প্রোডাক্ট বেশি পরিমাণে বিক্রি হয় এবং তাতে যদি ভালো লাভ মার্জিন রাখেন, তাহলে আপনার ইনকামের পরিমাণটাও বেশি হবে। যেমন ৫০০ টাকার একটি প্রোডাক্টে ৫০ টাকা করে লাম মার্জিন রেখেছেন, ওই প্রোডাক্টটি আপনার সারা মাসে ১০০ রিসেল হয়েছে । তাহলে আপনার লাভ হবে ৫০×১০০ = ৫০০০ টাকা। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন প্রোডাক্ট এর রেট অনুযায়ী লাভ মার্জিন সেট করবেন।
এইভাবে যদি আপনার কমপক্ষে ৫টি প্রোডাক্টও ৫০ টি করে রিসেল হয়, তাহলে সেগুলিতে যদি ৪৯ টাকা করেই কমপক্ষে লাভ মার্জিন রাখেন। তাহলে প্রোডাক্ট বিক্রি হলো ৫০×৫ = ২৫০ টি। লাভ মার্জিন ৪৯ টাকা করে হলে ২৫০×৪৯ = ১২,২৫০ টাকা ইনকাম হবে। তাই মোটামুটি একটা ধারণা করা যায় প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আরামসে ইনকাম করা যেতে পারে।
আপনার রিসেলিং বিজনেস যত গ্রো হবে তত বেশি আপনার ইনকামের প্রফিট হতে থাকবে। তাই যে কোন কাজে প্রথম অবস্থায় মেহনত খুব বেশি অবশ্যই লাগে এবং ইনকামটা খুবই কম হয়, কিন্তু পরবর্তীকালে ব্যবসা যখন গ্রো করতে থাকে তখন আপনার মেহনতটা আর আগের মত প্রয়োজন হয় না কিন্তু ইনকাম পরিমাণটা বাড়তে থাকে।
👉 FAQ of Re-Selling business
Q) Reseller কাদের বলে ?
যারা রিসেলিং করেন তাদেরকে রিসেলার বলা হয়। অর্থাৎ যারা অন্য কিনে সেটিকে পুনরায় বিক্রি করে বা কোন প্লাটফর্মের প্রোডাক্ট কে রিসেল করেন তাদের রিসেলার বলে।
Q) re selling প্ল্যাটফর্ম কি ?
যে সমস্ত প্ল্যাটফর্ম অর্থাৎ ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে রিসেলিং করা হয়। সে সমস্ত প্ল্যাটফর্ম গুলিকে রিসেলিং প্ল্যাটফর্ম বলে।
Q) re selling প্ল্যাটফর্মে ইনকাম কতটা করা যায় ?
রিসেলিং ব্যাবসায় (Re-Selling business) ডিপেন্ড করে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রি এবং লাভ মার্জিন রাখার উপরে। যদি প্রোডাক্ট বেশি বিক্রি হয় এবং লাভ ভার্জিন বেশি থাকে তাহলে আপনার ইনকাম বেশি হবে।
Q) কি কি রিসেলিং বা re sell করা যায় ?
দৈনন্দিন জীবনে মানুষ যে সমস্ত জিনিস ব্যবহার করছে সমস্ত কিছুকেই রিসেল করা যায়। যেমন পোশাক-পরিচ্ছদ, মানুষের সাজ-সজ্জার জন্য বিভিন্ন উপকরণ, সোনার বিভিন্ন অলংকার, রুপো ও হিরে এবং এমিটেশনের বিভিন্ন অলংকার, বাড়ির বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, বাড়ি সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ, মোবাইল(selling mobile), ল্যাপটপ( selling laptop), কম্পিউটার, গাড়ি, টিভি ও পাখা ও বাল্ব ও ইলেকট্রিক্যাল তার এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স মেটেরিয়ালস ইত্যাদি সমস্ত জেনেছি যা অনলাইনে বা দোকানে বিক্রি হয় সেই সমস্ত উপকরণের সবগুলোই আপনারা চাইলে রিসেলিং করতে পারেন।।