mustard oil expeller – সরিষা তেল তৈরির কাজ কিভাবে শুরু করবেন, কি কি কাঁচামাল ও মেশিনের প্রয়োজন, খরচ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে সরিষার ব্যবহার হয়ে আসছে। এর ইংরেজি নাম হল মাস্টার্ড অয়েল (mustard oil) ।
সরিষর তেল তেল সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষ এই সভ্য সমাজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ সরিষা তেলের ব্যবহার এতটাই পরিমাণে রয়েছে যে বয়স্ক লোকেরাতো দূরের কথা বাচ্চারা পর্যন্ত এই তেল সম্পর্কে জানে।
আজকাল এমন কোন বাড়ি পাওয়া যাবেনা যেখানেতে রান্না হয় না। আর যেখানেতে রান্না হয় বিশেষত তরকারি রান্নার ক্ষেত্রে সরিষার তেল একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কেননা আপনি কি কোথাও শুনেছেন যে তেল বিহীন তরকারি রান্না, এরকম কথা কারো মুখেও আপনি শুনবেন না। কারণ তেল ছাড়া তরকারি রান্না হয়না বললেই চলে।
যদিও আজকাল সয়াবিন ও অন্যান্য জিনিস থেকে তৈরি তেল বাজারে চলছে, তবুও সরষে তেলের ডিমান্ড আগের মতই রয়েছে। কারণ অন্যান্য তেল দিয়ে রান্না করলেও তার সঙ্গে কিছুটা পরিমাণ হলেও সরিষার তেল যোগ করে বিশেষত ভালো স্বাদ নিয়ে আসার জন্য। অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে আমাদের বাবা-মা এবং পূর্বসূরীরা কিন্তু এই সরিষার তেলের তৈরি তরকারি খেয়েই বড় হয়ে এসেছে। বর্তমানে আমরাও খাচ্ছি।
এমনকি রান্না ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যবস্তু তৈরিতেও সরিষার তেলের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এমনকি বাচ্চা জন্মানোর কয়েক দিনের পর থেকেই সরিষার তেল শরীরে মাখিয়ে ( mustard oil uses for skin ) রোদে দেওয়া হয় যাতে বাচ্চা স্ট্রং হয়। এবং মানুষজন বৃদ্ধ বয়স্ক পর্যন্ত এই সরিষার তেলকে শরীরে মেখে থাকে শরীরের খসখসানি এবং চামড়ার দুর্বল ভাবকে কাটানোর জন্য।
এছাড়া, এটি হৃদশক্তিকে বৃদ্ধি করে। সরিষার তেল ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে তুলে। এটি আমাদের হজমে সাহায্য করে থাকে । এর ভিটামিন ও মিনারেল অকালে চুলপাকা রোধ (mustard oil on hair) করে। সরিষার তেলে গ্লুকোসিনওলেট নামক উপাদান থাকে যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক হিসেবে পরিচিত, তাই এটি টিউমারের গঠন রোধে সাহায্য করে।
যাইহোক সরিষার তেলের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিদিনই খাবার দাবার বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই সরিষার তেলের চাহিদা বছরের কোন সময়ই থেমে যাবে না। সারা জীবন ধরেই এর ডিমান্ড কিছু কম প্রায় একই মেকারে থাকবে। তাই আপনারা যদি সরিষার তেল প্রস্তুত করে সেটিকে বিক্রি করার কাজ করেন তাহলে এ থেকেও আপনি ভালো মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।
👉 কাঁচামাল
এর জন্য প্রধান এবং মূল কাঁচামাল হল ভালো মানের সরিষা। আপনি যদি গ্রামীন এলাকায় বসবাস করেন তাহলে এই সরিষা অতি সহজেই চাষীদের বাড়ি থেকে পেয়ে যাবেন। তবে চাইলে আপনি সরিষার চাষও করতে পারেন। তাহলে আপনাকে আর সরিষা কিনতে হবে না টাকা দিয়ে। এবং আপনি যদি শহরাঞ্চলে বসবাস করেন তাহলে বড় পাইকারি মুদির দোকান বা সরিষার গোলা থেকে অতি সহজে সরিষা পেয়ে যাবেন।
দ্বিতীয়ত ভালো মানের লাল টকটকে ধরনের ঝাঁঝালো কিছু লঙ্কার প্রয়োজন হবে। এগুলি সরিষার তেলে ঝাঁঝালো ভাব নিয়ে আসতেছে সাহায্য করবে।
সরিষার তেল তৈরির ব্যবসায় অন্যান্য সরঞ্জাম হিসেবে লাগবে তেল প্যাকিং এর জন্য প্লাস্টিকের বোতল। তেল মাপার জন্য লিটারের ডাব্বা। তেল ঢালার জন্য একটি চুঙ্গী।
👉 মেশিনের দাম ও কোথায় কিনবেন
সরিষার তেল তৈরির জন্য বিশেষ অথবা যে মেশিনটির প্রয়োজন হয় mustard oil expeller machine, এটির দাম সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়েছে। তবে যত কম মূল্যে নিবেন, প্রতি ঘন্টায় পেশায় ক্ষমতা তত কম হবে। আপনাকে এমন একটি মেশিন নিতে হবে যেটি কমপক্ষে ঘন্টায় অন্তত যেন ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত সরিষা পেশাই করতে পারে। তবে অনেক মেশিন রয়েছে যেগুলি ঘন্টায় ৫০ কেজি থেকে এক কুইন্টাল পর্যন্ত সরিষা পেশাই করে থাকে। যারা বড় বড় ফ্যাক্টরি তৈরি করতে চান তাদের জন্য ওই মেশিনগুলো বেস্ট, তবে এর মূল্যও আপনাকে ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পে করতে হতে পারে।
আপনারা মেশিনটি কেনার জন্য কোন বড় মেশিন বিক্রেতার কাছেও যেতে পারেন। অথবা অনলাইনের মাধ্যমে কেনার জন্য আপনাকে সার্চ করতে হবে mustard oil expeller machine in দিয়ে আপনার জেলা অথবা রাজ্যের নাম। তাহলে আপনারা অনেক মেশিন পেয়ে যাবেন।
তবে মেশিন কেনার ক্ষেত্রে এবং টাকা পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ আজকাল প্রতারকের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে।
👉 সরিষার তেল তৈরির পদ্ধতি
সর্বপ্রথম সরিষাগুলোকে জলের সাহায্যে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। যাতে তার মধ্যে লেগে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার হয়ে যায়। এরপর সেগুলিকে কোন কিছুর সাহায্যে ছেঁকে নিতে হবে এবং কিছু সময় জল ঝরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
⚒️ ঘানিতে প্রস্তুতির পদ্ধতি
সরিষার তেল প্রস্তুতির পদ্ধতি খুবই সহজ। তাই কিছু বছর আগেও আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘানিতে সরিষার তেল প্রস্তুত করা হত। নিম্নে ঘানিতে কিভাবে সরিষার তেল প্রস্তুত করা হয় তাহলে করা হল –
বিশেষত মাঝে একটি বালতির মতো নিচের অংশ ছুচ এবং উপর চওড়া বড় ধরনের বস্তু বোঝানো হত। এই বস্তুটির নিচের দেখে একটি ছিদ্র থাকত ছিদ্র তে একটি নলযুক্ত কাঠের বা বাসের অংশ লাগানো থাকে।
ওই বস্তুটির মধ্যে সরিষা দিয়ে, সেই সরিষার ওপরেতেই একটি গোল নাঙ্গল এর মত জিনিস দেওয়া হত, তার সঙ্গে বড় একটি বাঁশ বা কাঠের কোন অংশ যুক্ত করা হত, এর সঙ্গে একটা বা দুটো গরুকে দিয়ে অথবা মানুষ ঘুরিয়ে সরিষা গুলোকে একেবারে পিষে সেগুলি থেকে তার তেল বার করা হত।
ওই নাঙ্গলের মত অংশটিকে যত ঘোরানো হত সরিষা গুলি পেশাই হয়ে, বস্তুটির নিচে থাকা ছিদ্র দিয়ে বিশেষত নলের মত যে অংশ যুক্ত করা থাকে তা দিয়ে বার হয়ে আসে, ওই ছিদ্র বা নল বরাবর একটি পাত্র রাখা হয় সেই পাত্রে সরিষার নিসার্য গুলি গড়িয়ে এসে বা টপকে টপকে পড়ে। এরপর সেই তেলগুলোর মধ্য কিছু আবর্জনা থাকে যেগুলিকে ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে নিলেই খাবার বা ব্যবহারযোগ্য সরিষার তেল পাওয়া যাবে।
🏭 মেশিনের সাহায্যে সরিষার তেল তৈরি
আপনি যদি সেমি অটোমেটিক সরিষার তেল প্রস্তুতির মেশিন নেন। তাহলে আপনাকে খুব একটা কষ্ট করতে হবে না, শুধুমাত্র সরিষার দানা গুলিকে দেয়ার পরেই কিছু বোতামের সাহায্যে সেটিং করলেই অটোমেটিক্যালি পরিষ্কার হওয়া সরিষার তেল পেয়ে যাবেন। নিম্নে উল্লেখ করা হল –
প্রথমে সরিষা গুলোকে মেশিনের হপারে ঢালতে হবে। হলার যত বড় হবে তত কেজি সরষে আপনি ঢালতে পারবেন একসঙ্গে।
এরপর মেশিন থেকে চালু করতে হবে। এর জন্য আপনারা বাটন বোর্ডে গ্রীন বাটন পেয়ে যাবেন, যেদিকে দাবালেই মেশিন স্টার্ট হয়ে যাবে। মেশিনের সুইচবোর্ড সেকশনে আপনারা আরও অনেকগুলি বোতাম পেয়ে যাবেন যেমন তেল ফিল্টারিং সুইচ, মোটরের প্রেসার সুইচ অর্থাৎ পাওয়ার কমানো বাড়ানো সুইচ, রিভার সুইচ, টেম্পারেচার বা ভোল্টেজ কমানো বাড়ানোর সুইচ । আপনাকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ওই সমস্ত সুইচ গুলোকে ব্যবহার করতে হবে।
মেশিন চালু করে টেম্পারেচার ও মোটরের পাওয়ার ক্ষমতা সেট করলেই অটোমেটিক্যালি শশা গুলো পেশায় হতে শুরু হয়ে যাবে। এরপর অটোমেটিক্যালি সরি সব পেশাই হয়ে তেল গুলি ফিল্টার অংশে গিয়ে পড়তে থাকবে।
এরপর ফিলটারে থাকা জালতির মতো অংশ সরিষার নিসার্যের সঙ্গে থাকা আবর্জনা গুলিকে ছেঁকে নেবে, এবং ফিল্টারের নিচে তেল গুলি ছাকা হয়ে একটি থাকা পাত্রে জমা হবে।
ফিল্টারের পাত্রের একেবারে নিচে একটি নল সিস্টেম থাকে। ওই নলটি খুলে দিলেই অটোমেটিক্যালি ফিল্টার হওয়া সরিষার তেল বেরিয়ে আসবে। যেগুলি ব্যবহারযোগ্য।
এরপর এই তেল গুলিকে আপনি প্যাকেটজাত বা বোতলজাত করে বিক্রি করতে পারবেন।
আর সরিষাগুলো যখন পেশাই হবে এর যে অবশিষ্ট অংশ অর্থাৎ ছোবড়া গুলি গোল আকারে মেশিনের বিপরীত সাইটে একটি অংশ থাকি সেগুলি দিয়ে বাড়িয়ে আসবে। এই কলগুলিও অনেক কাজে লাগে। যেমন জমিনেতে স্যার হিসেবে, গরুর খাদ্য হিসেবে, মাছের খাদ্য হিসেবে আরোও অনেক কাজে এগুলি ব্যবহার হয়ে থাকে।
👉 খরচ
একটি রিপোর্ট অনুযায়ী এই ব্যবসাটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের শুরু করতে গেলে আপনার ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এবং যদি আপনি বড় আকারের শুরু করেন তাহলে ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকার মতো খরচ হবে। কারণ মেশিন ও কাঁচামাল সহ আরও অন্যান্য সরঞ্জাম আপনাকে কিনতে হবে।
বিদ্র : – উপরের দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান অর্জনের জন্য। ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে বা মেশিন কেনার ক্ষেত্রে বা কাউকে টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে নিজেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোন সমস্যায় এই ওয়েবসাইট দায়বদ্ধ নয়।