Paddy Crops – ধান চাষের পদ্ধতি, চারা ও চারার জমি প্রস্তুত, রোপনের জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, গাছের পরিচর্যা, ধান কাটার সময় ও পদ্ধতি, খরচ সম্পর্কে সমস্ত তথ্য।
ধান সারা বিশ্বে বৃহৎ পরিসরে চাষ করা হয় এবং এটি সারা বিশ্বে উৎপাদিত প্রধান ফসলগুলির মধ্যে একটি অন্যতম । খাদ্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত চাল ধান থেকেই পাওয়া যায়। খাবার সম্পর্কে কথা বললে, এটি কেবল ভারত- বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই একটি প্রধান খাদ্য। ধান উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
আর প্রতিবছরই সময় অনুপাতে ধান থেকে উৎপাদিত চালের চাহিদা থেকেই থাকে। কারণ পৃথিবী যতদিন থাকবে অর্থাৎ মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এই ধানের চাহিদা থেকেই থাকবে। ধান থেকে উৎপাদিত চাল আটা তৈরীর কাজে লাগে, যে আটা থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা হয়ে থাকে।
📝👉 ধান চাষের ( paddy crop ) চারা গাছের জন্য পদক্ষেপ
ধান গাছ রোপনের জন্য, প্রথমে ধান চাষের ( Paddy Crops ) জন্য চারা গাছ প্রস্তুত করতে হবে।
👉 ধান চারার জন্য জমি প্রস্তুত
ধান চারার জন্য জমি প্রস্তুতের ( paddy fields ) ক্ষেত্রে, প্রথমে জমিতে জল ভরতে হবে। এরপর একই সঙ্গে পরপর ২ বার জমিতে লাঙ্গল করতে হবে যাতে মাটি নরম হয়। এরপর মই দিয়ে মাটিকে সমান করতে হবে । এরপর আপনার ধান চারার জন্য বীজ বপন করতে জমি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
👉 ধান চারার জন্য বীজ বাপন
>> শীতকালের ক্ষেত্রে~ যদি শীতকালে ধান চাষের ( Paddy Crops ) জন্য বীজ ধান বপন বা ছড়ানো হয়। তাহলে জমিতে বীজ ধান বপণের পূর্বে থলিতে বা বস্তাই করে জলেতে এক থেকে দুই দিন জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। রাত্রিবেলা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং যখন রোদ উঠবে তখন বস্তা সমেত রোদে রাখতে হবে। এইভাবে দুই থেকে তিন দিন করতে হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত বীজের মুখগুলো হালকা ফাটে অঙ্কুরদ হচ্ছে।
এরপর জলে ভেজানো বীজ গুলিকে হালকা গরম জল সমেত জাগ দিতে হবে, বীজ অঙ্কুরোদগম হওয়ার জন্য। বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ে গেলে এটি জমিনেতে ফেলার অর্থাৎ বপণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে ।
>> গরমকালের ক্ষেত্রে~ গরম ঋতুতে ধান চাষের ( Paddy Crops ) ক্ষেত্রে বীজকে বস্তা বা থলিতে ভরে দু-তিন দিনের মতো জলেতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। রাত্রে জলেতে ডুবিয়ে রাখতে হবে এবং সকালে রৌদ্র ওঠার পর রোদে বস্তা সমেত রাখতে হবে। এভাবে দু তিন দিন রাখলে যদি নিজের মুখগুলো হালকা অঙ্কুরোদগম অর্থাৎ হালকা ফেটে যায় তাহলে সেটিকে জমিতে ধান গাছের চারার জন্য ছড়াতে হবে।
:: ধান চাষের ( Paddy Crops ) জন্য জমিতে ধান বীজগুলো ছাড়ানোর পর প্রয়োজন অনুযায়ী জমিতে সার ও জল দিতে হবে। এইভাবে ২৫ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ধান চারাগুলি জমিনেতে রোপনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। এরপর শুরু হবে রোপনের জন্য জমি প্রস্তুত থেকে জমিনেতে চারা গাছ রোপনের কাজ।
📝👉 ধান চারা রোপণের পর্যায়ে পদক্ষেপ
👉 জমি প্রস্তুতি
প্রথমে জমিতে জল ভরতে হবে। এরপর ধান চাষের ( paddy crop ) জন্য ২ বার জমিতে লাঙ্গল করতে হবে। প্রথম নাঙ্গল দেওয়ার ১ সপ্তাহ বা ১৫ অথবা ২০ দিন পর দ্বিতীয় নাঙ্গল দিতে হবে। প্রথম নাঙ্গল থেকে দ্বিতীয় নাঙ্গলের ব্যবধান নির্ভর করবে যে চাষীর কাছে সময় কতদিন রয়েছে ।
জমিনেতে নাঙ্গলের পর চারাগাছ রোপনের পূর্বে জমিকে সমতল করতে হবে অর্থাৎ জমিনেতে মই দিতে হবে। এরপর জমিটি চারা গাছ রোপনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
👉 ধান চারাগাছ রোপণ
জমিতে মই দেয়ার পর, যে জমিতে বা যেখানেতে ধান বীজ ছড়িয়ে ছিলেন অর্থাৎ যে জমিতে বা যেখানেতে আপনার প্রস্তুত করা ধান চারা রয়েছে, সেখান থেকে ধান চারা গুলি তুলে নিয়ে আসতে হবে, যেখানেতে আপনি ধান চারাগাছ রোপন করবেন। আর এই কাজ করার জন্য আপনি নিজেও কাজে লাগতে পারেন বা কয়েকজন মজুর কেউ নিযুক্ত করতে পারেন।
চারা গাছ নিয়ে আসার পর যে জমিনেতে আপনি মই দিয়েছেন অর্থাৎ যে জমিতে আপনি চারা গাছ রোপন করবেন, সেখানেতে যে কোন দিক থেকে চারা গাছ রোপনের কাজ শুরু করতে পারেন।
আর এই রোপনের কাজ একটা জমিতে এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই কমপ্লিট করলে ভালো হয়। কেননা বেশিদিন ব্যবধান হলে চারা গাছগুলির বৃদ্ধির মধ্যেও বৈপরীত্য দেখা দিতে পারে।
👉 আগাছা পরিষ্কার
ধান জমি আগাছা পূর্ণ হয়ে যায়, তাই যদি পারেন বাজারে অনেক আগাছনাশক পাওয়া যায়, সেগুলির যেকোনো ধান চারা গাছ রোপনের পাঁচ থেকে সাত দিন পর জমিনে প্রয়োগ করতে পারেন।
এবং আপনাকে অবশ্যই ধান চারা গাছ রোপনের ১৫ থেকে ২৫ দিন পর, নিজে থেকে বা মজুর লাগিয়ে জমিনের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
👉 সার ও কীটনাশক ব্যবহার
ধান চাষের ( paddy crop ) জন্য জমিনেতে চারা গাছ রোপনের পূর্বে আপনি চাইলে জৈব সার হিসেবে গোবর ছড়াতে পারে। এছাড়া ধান চারা গাছ রোপনের সময় বা এক সপ্তাহর মধ্যে একবার রাসায়নিক ইউরিয়া বা অন্যান্য অনুখাদ্যসারগুলি ছড়াতে পারেন।
এরপর চারা গাছ গুলির মধ্যে যখন ফলন শুরু হবে, তখন আরেকবার আপনি প্রয়োজন মাফিক রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে পারেন, যাতে করে গাছেরা খাদ্য খেয়ে বলিষ্ঠ হয় এবং ফলন ভালো হয়।
আর গাছগুলি যাতে কোন রোগ দ্বারা বা পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত না হয়। তাই ফলনের পূর্বে এবং ফলনের পরে কমপক্ষে দুইবার কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করবেন।
👉 জমিনে জলসেচ
জমিনেতে বীজ ধান বপণের সময় থেকে শুরু করে জমিনেতে চারা গাছ রোপন এবং ফসল পাকার সময় পর্যন্ত, প্রয়োজন মাফিক জমিনেতে জলসেচের ব্যবস্থা করতে হবে। আর একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন ফসল যখন ফলন শুরু হবে সেই মুহূর্তে জমিনে কিন্তু জল পরিপূর্ণ থাকা বাঞ্ছনীয়। ধান পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য।
📝👉 ফসল কাটার প্রক্রিয়া
👉 হতে ফসল কাটা
ফসল কাটা ~ ধান চাষের ( paddy cropping ) পর ফসল যখন পেকে যাবে অর্থাৎ ধান যখন কাটার জন্য উপযুক্ত হয়ে যাবে। তখন চাইলে আপনি নিজে থেকেই বা মজুর লাগিয়ে কাস্তের সাহায্যে হাতে ধান কাটতে পারেন। হাতের সাহায্য ধান কাটলে কাটা ধান গাছগুলিকে জাগায় জাগায় জমা জমা করে রাখতে হবে।
ফসল বাধা ~ আপনি যদি হাতে ফসল কাটেন, তাহলে ফসল কাটার পর গাছ গুলো দু-একদিন জমিনেতে রোদে শুকানোর জন্য রাখতে হবে। কাটা ধান গাছগুলিকে আটি আকারে বাঁধতে হবে। কেননা সেগুলিকে না বাধলে ফসল ঝাড়ার জন্য উপযুক্ত হবে না।
ফসল ঝাড়া ~ ধান গাছগুলিকে বাধার পর, সেগুলিকে বাড়িতে বয়ে নিয়ে আসতে হবে। বা চাইলে মাঠেও সেগুলিকে ছাড়াই মেশিনের সাহায্যে ছাড়তে পারে। ফসল ঝাড়ার পর সেগুলিকে পরিষ্কার করতে হবে, এরপর ফসলটি বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
👉 হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা
আপনি যদি হাতের পরিবর্তে হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে ধান কাটেন। তাহলে আপনার পরিশ্রম হবে না বললেই চলে। কারণ মেসিন ধান কেটে, ধান ঝাড়াই করে অটোমেটিক্যালি আপনাকে পরিষ্কার হওয়া ঝাড়া ধান প্রদান করে দেবে।
যা আপনি চাইলে ধান গোলা মালিকের সঙ্গে কন্টাক্ট করে সরাসরি সেই ধান বিক্রি করতে পারেন। আর যদি সেই ধান গোলার মালিক না নেই, তাহলে আপনাকে দু থেকে তিন দিন শুধুমাত্র রোদ লাগিয়ে বিক্রির জন্য নিয়ে গেলেই বিক্রি হয়ে যাবে।
👉 ধান চাষে খরচ (paddy crops cost)
ধান চাষে খরচের কথা যদি বলা যায়। তাহলে এর জমিতে জল দেওয়া থেকে শুরু করে, বীজ কেনা, মজুরি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং ধান ঝাড়া পর্যন্ত খরচের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
একটা রিপোর্ট অনুযায়ী এক একর জমি ধান চাষ ( paddy cropping ) করতে সর্বমোট ১৫,৫০০ – ১৬,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মজুরের টাকাও এড রয়েছে। আপনি যদি মজুর না লাগিয়ে নিজেই বা পরিবারের সমস্ত লোকজন নিয়ে কাজ কর্ম করেন। তাহলে আপনার মজুরির টাকা আরো ৩৫০০-৪০০০ টাকার মতো কমে যাবে।
অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে আপনার এক একর জমি চাষ করতে সর্বমোট ১১,০০০-১২০০০ টাকা খরচ হতে পারে। আমাদের এখানে বছরে দুইবার ধান চাষ হয়, কোন কোন জায়গায় তিনবারও হয়ে থাকে, সেই অভিজ্ঞতার সাপেক্ষে খরচের কথা বললাম।
📝👉 ধান চাষে ( paddy cropping ) সরকারি লোন এবং ভর্তুকি
ধান বিভিন্ন অন্নের মধ্যে প্রধান এবং অন্যতম। তাই যে কোন দেশের সরকারি ধান চাষ কে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকেও ধান চাষের জন্য খুবই অল্প পরিমাণ সুদে ঋণ পাওয়া যায়।
আবার যদি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সরকারের তরফ থেকেও অনেক সময় নানান সুযোগ-সুবিধা এবং ভর্তুকি প্রদান করা হয়ে থাকে।
এছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার এবং বিভিন্ন কোম্পানি চাষবাসের জন্য এগরিকালচার ইন্সুরেন্স প্রদান করে থাকে। ওই সমস্ত ইন্সুরেন্স গুলি করে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে রিপোর্ট জানিয়ে ক্ষতিপূরণ লাভ উঠাতে পারেন।
👉 ধান চাষে লাভ ( profits of paddy cropping)
ধান চাষে লাভের কথা যদি বলা যায়। বিঘা পিছু যদি কমপক্ষে ২২ মন করেও ধান হয় । তাহলে এক একর জমিতে কমপক্ষে ৫৪ মন ধান হতেই পারে।
৫৪ মন × ৪০ ( ১ মন ৪০ কেজি ) কেজি = ২১৬০ কেজি |
২১৬০ কেজি ÷ ১০০ কেজি ( ১ কুইন্টাল ১০০ কেজি ) = ২১.৬ কুইন্টাল |
যদি এক কুইন্টাল ধানের দাম করে ১৮০০ টাকা হয় | তাহলে ১৮০০×২১.৬ ( কুইন্টাল ) = ৩৮,৮৮০ টাকা | অর্থাৎ ১ একর জমিতে আনুমানিক ৩৮,৮৮০ টাকা উপার্জন হবে।
👉 ধান চাষে আয়-ব্যায় হিসাব
যদি আপনি ধান মেশিনে না কাটিয়ে বা মজুর না লাগিয়ে সমস্ত কাজ নিজে বা পরিবারের লোকজনদেরকে নিয়ে করেন। তাহলে খরচ ১২০০০ টাকা যদি হয় । তাহলে ৩৮,৮৮০ – ১২০০০ = ২৬৮৮০ টাকার মত লাভ হবে । অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি ।
আর আপনি নিজে তেমন কোন কাজ না করে, যদি মজুর লাগিয়ে বা মেশিনের সাহায্যে ধান কাটেন। তাহলে যদি সর্বোচ্চ ১৬০০০ টাকাও খরচ হয়। তাহলে ৩৮,৮৮০ – ১৬,০০০ = ২২,৮৮০ টাকা লাভ হবে। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ এর কাছাকাছি।
📝👉 FAQ Of paddy crop
Q) ধান কি ?
ধান হলো এক ধরনের ফসল বা খাদ্য। ধান একটি একবীজ ফসল। বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই ধান থেকে উৎপাদিত চালের মাধ্যমে ভাত খাদ্য হিসেবে একটি প্রধান খাদ্য ।
Q) ধান থেকে উৎপাদিত খাদ্য দ্রব্য কি কি ?
ধান থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয়ে থাকে। যেমন ভাত, রুটি, মুড়ি, আটা, এবং এই আটা থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য যেমন বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, কেক ইত্যাদি।
Q) ধানের কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে ?
ধান থেকে উৎপাদিত চালের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ রয়েছে যেমন কার্বোহাইড্রেট, ক্যালোরি, ফ্যাট, খনিজ লবণ , ক্যালসিয়াম ছাড়াও কিছু কিছু ভিটামিন সামান্য পরিমাণে রয়েছে।
Q) ধান চাষ বছরে কবার করা যায় ?
সাধারণত ধান চাষ ( paddy cropping ) বছরে দুইবার করা যায়। যা রবি ঋতু এবং খারিফ ঋতুতে। কিন্তু অনেকে বছরের তিনবারও ধান চাষ করে থাকে। তিনবার ধান চাষ করার জন্য তিনমেসে ধান চাষ করতে হবে।
Q) ধান চাষে সময় কত লাগে ?
ধান চাষের ( paddy cropping ) জন্য ফসল রোপন থেকে ফসল পাকা পর্যন্ত প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মতো সময় লেগে যায়।
Q) কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল ধান বীজের নাম ?
কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল ধান বীজের নাম হলো সুফলা, চৈতালি, চান্দিনা, মালা, বিপ্লব, আশা, প্রগতি, হীরা, স্বর্ণ মাসুরি।