আগে কিছু স্বার্থভোগী চোরা শিকারিরা অর্থের লোভে হাতিকে শিকার করত। কারণ হাতির দাঁত মূল্যবান জিনিস। চোরা শিকারি, বন জঙ্গল ধ্বংস ও আরও বিভিন্ন কারণে দিন দিন হাতির সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। এরূপ পরিস্থিতিতে হাতিকে রক্ষা করার জন্য এবং হাতির সংখ্যাকে বাড়ানোর জন্য 1992 সালে হাতি সংরক্ষণ প্রকল্প চালু করা হয়।
এই হাতি সংরক্ষণ প্রকল্পটি 31 বছর হয়ে গিয়েছে। এটি একটি কেন্দ্র সরকার দ্বারা পরিচালিত প্রকল্প। যেখানে ভারত সরকার হাতের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারতে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পর সবচেয়ে বেশি যেই সংরক্ষণ প্রকল্পটিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তা হলো এই হাতি সংরক্ষণ প্রকল্পকে।
ভারতে যে সমস্ত রাজ্যগুলি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রায় 23 টি রাজ্যে এই হাতি সংরক্ষণ প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার হাতি সংরক্ষণ প্রকল্পের মধ্যে থাকা রাজ্যগুলিকে অর্থ এবং প্রযুক্তিগতভাবে সাহায্য করবে। এমনকি হাতির গণনাতে, হাতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের অফিসারগুলিকে ট্রেনিং দিতে এবং হাতি ও মানুষের মধ্যে যাতে সংঘর্ষ না বাধে, সে বিষয়েও সাহায্য করবে সরকার।
এই প্রকল্প অনুযায়ী 1992 সালে যেখানে হাতির সংখ্যা 25,000 সেখানে 2022 সালের গণনা অনুযায়ী ভারতে বাঘের সংখ্যা হয় 30,000 এর বেশি। 2022 সালের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ভারতে প্রায় 33 টি হাতি সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। ভারতে উত্তরের দু-একটি রাজ্য ছাড়া, বেশিরভাগ হাতি সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলি দক্ষিণ এবং পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে রয়েছে। আবার রাজ্যগুলির মধ্যে আসাম এবং তামিলনাড়ু রাজ্য দুটিতে সবচেয়ে বেশি হাতি সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যে
1) হাতির জন্য প্রাকৃতিক বসবাস ক্ষেত্রকে রক্ষা করা। অর্থাৎ যাতে হাতির বসবাসযোগ্য এলাকাগুলিতে থাকা জঙ্গলগুলিকে যথেচ্ছ ভাবে ধ্বংস না করা। এবং সেখানেতে মানুষের লোকালিটি না তৈরি করা।
2) হাতি যে রাস্তা ধরে যাতায়াত করে অর্থাৎ হাতির করিডোর গুলি রক্ষা করা।
3) কোন কারণবশত মানুষ এবং হাতির মধ্যেও যদি সমস্যা তৈরি হয়, সেই সমস্যাকেও পর্যবেক্ষণ করে সমাধান করা এই প্রকল্পের আরেকটি উদ্দেশ্য।
4) চোরা শিকারিদের হাত থেকে হাতিকে রক্ষা করা। হাতির দাঁত খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান, তাই এই দাঁত পাওয়ার জন্য তারা হাতিকে হত্যা করত। কারণ হাতি বেঁচে থাকতে কোনোদিনই তারা এই দাঁত হাতির কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারবে না।
5) হাতি সংরক্ষণকে যাতে শিক্ষাক্ষেত্রে চর্চার বিষয় করে তোলা যায়, তাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
6) হাতি এবং হাতি সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলিকে পর্যটকদের যাতে আকৃষ্ট করানো যায়, তাও এই প্রকল্পের আরেকটি উদ্দেশ্য।
7) কোন সময় কোন হাতি যদি অসুস্থতায় ভোগে, সে ক্ষেত্রে ওই অসুস্থ হাতির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা । কারণ অনেক সময় অসুস্থতায় পড়ে অনেক হাতিরও মৃত্যু হয়ে যায়। যা হাতির সংখ্যা কমার আরেকটি কারণ।
হাতির করিডোর কি জানুন
হাতির করিডোর হচ্ছে হাতি যে রাস্তা ধরে এক আবাসস্থল থেকে অন্য অবস্থানে গিয়ে থাকে, সেই রাস্তাকেই হাতির করিডর বলা হয়ে থাকে। এই করিডোর কোন একটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, আবার একটি দেশের সঙ্গে অপর একটি দেশের মধ্যেও সংযুক্ত থাকতে পারে।
করিডোরের কথা যদি বলা যায় তাহলে দক্ষিণ ভারতে 20টি, উত্তর-পূর্ব ভারতে 22টি, মধ্য ভারতের 20টি, উত্তর-পশ্চিম ভারতে 12টি এবং পশ্চিমবঙ্গে 14টি হাতির করিডর রয়েছে। যেগুলি হাতি সংরক্ষণ কেন্দ্র ছাড়াও অন্যান্য বনজ প্রাণী সংরক্ষণের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে।
হাতিগুলিকে যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে
প্রথমত, চোরা শিকারিদের জন্য ভয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যারা অকারণে চোরা শিকারীরা অর্থের জন্য হাতিকে হত্যা করছে।
দ্বিতীয়তঃ, হাতির আবাসস্থলের উপর দিয়ে রোড এবং রেললাইন তৈরি হয়েছে। তাছাড়া অনেক রেললাইন হাতির করিডর অর্থাৎ হাতির যাতায়াত করা রাস্তার উপর দিয়েই চলে গিয়েছে। যার ফলে হাতির যাতায়াতে অসুবিধা তৈরি হচ্ছে। এমনকি ট্রেনের ধাক্কায় অনেক সময় হাতিও মারা যাচ্ছে।
তৃতীয়তঃ, আবার হাতির আবাসস্থলের পাশেই বা যাতায়াতের রাস্তার পাশে পর্যটকদের জন্য বড় বড় বিল্ডিং তৈরি হয়েছে।যা হাতির বসবাসের জন্য প্রতিকূল অবস্থা তৈরি করছে।
চতুর্থতঃ, তাছাড়া সাধারণ মানুষ তার নিজেদের সুবিধার জন্য বন জঙ্গলের পাশে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য ফসল চাষ করছে কিন্তু জঙ্গল থেকে হাতি বেরিয়ে এসে ফসলগুলিকে খেয়ে ফেলছে, যার কারণে মানুষ এবং হাতির মধ্যেও সংঘর্ষে তৈরি হচ্ছে।
আরও অনেক কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্য হাতি গুলিকে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
প্রথমত, যদি কোন হাতি করিডোর কোন মানুষ বহুল এলাকার উপর দিয়ে যায়, তাহলে সেই করিডরকে অর্থাৎ রাস্তা পরিবর্তন করাতে হবে। যদি সম্ভব না হয় তাহলে ওই এলাকায় বসবাসকারী মানুষদেরকে পুনর্বাসন দিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।
দ্বিতীয়, অবৈধভাবে হাতিকে হত্যা করা বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তৃতীয়, হাতি যদি বিপদগ্রস্ত বা রোদ্রস্থ হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
Conclusion
হাতি সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর প্রতি এক দশক অন্তর অন্তর ভারতে প্রায় ১৬৫০টিরও বেশি করে হাতির সংখ্যা বেড়েছে। তাই এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল সেই উদ্দেশ্যটি যথেষ্ট সফল হয়েছে। এবং ভবিষ্যতে ভারতে হাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে আরো বাড়তে থাকবে।
FAQ
দক্ষিণ আফ্রিকার বতসোয়ানা (Botswana) রাজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হাতি রয়েছে।
ভারতের হাতি এশিয়াটিক হাতি নামে পরিচিত। যেগুলি এলিফাস প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।
হাতি তার বাচ্চাকে প্রায় 19 থেকে 22 মাস পর্যন্ত গর্ভে ধারণ করে রাখে।
হাতির সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এবং হাতি কিম বিলুপ্ত হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য 1992 সালে হাতি সংরক্ষণ প্রকল্প শুরু হয়।
ভারতে বর্তমানে 33 টি হাতি সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।