বন্ধুরা, আপনি যদি ভারতে থেকে থাকেন এবং যেকোনো কোম্পানির সিম কার্ড ব্যাবহার করে থাকে, তাহলে টেলিকমিউনিকেশন বিল ২০২৩ সম্পর্কে আপনাদের অবশ্যই জানা দরকার। এই বিলে কিছু মেজর পরিবর্তন করা হয়েছে। এই বিল ১৮ই ডিসেম্বর ২০২৩ লোকসভায় ইন্ট্রোডিউসড করা হয়। এই বিলটিকে নিয়ে লোকসভার পার্লামেন্টে খুবই চর্চা হয়, এবং এর একদিন পর অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ লোকসভা থেকে বিলটি পাস হয়। এর পরবর্তীকালে ২১শে ডিসেম্বর ২০২৩ এ রাজ্য সভা থেকেও বিলটি পাস হয়ে যায়।

Today Weather, Today temperature, Weather tomorrow, Weather 7 days,
Image by Pexels

এর আগে ভারতে telecommunication bill তৈরি হয়েছিল। যেমন ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ বিল ১৮৮৫, ওয়ারলেসি টেলিগ্রাফি অ্যাক্ট ১৯৩৩, টেলিগ্রাফ ওয়্যার অ্যাক্ট ১৯৫০। তবে এগুলিরই একটি সংশোধিত রূপ বর্তমানের bill টি । নতুন টেলিকমিউনিকেশন বিলে কি কি বলা হয়েছে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

সিম কার্ড ফ্রড সংক্রান্ত

আজকাল ফ্রড সিম কার্ড নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। অর্থাৎ কেউ ফ্রড ভাবে অন্যের নামের সিম কার্ড নিয়ে নিচ্ছে। আপনারা হয়তো এর আগেও লক্ষ্য করেছিলেন, যেখানে কোন ডকুমেন্টস ছাড়াই সিম কার্ড পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু সরকারের রুলস অনুযায়ী ডকুমেন্টস ছাড়া তো সিম কার্ড তোলা যায় না। সিম কার্ড তোলার সময় কোনো না কোনো ব্যক্তির ডকুমেন্টস অবশ্যই দিতে হয়েছিল। তবে কার ডকুমেন্টস দেওয়া হয়েছিল সেই সম্পর্কে যে সিম কার্ড কিনছে সেও যেমন জানছিল না, তেমনি যার ডকুমেন্টসের দ্বারা সিম কার্ডটি তোলা হয়েছিল সেও কিন্তু জানতে পারত না। এর ফলে মানুষের সঙ্গে ফ্রড দিন দিন বেড়ে চলছিল।

তাই সরকারের তরফ থেকে নতুন টেলিকম বিলে বলা হয়, কোন ব্যক্তি সিম কার্ড নিতে চাইলে তার বায়োমেট্রিক ভেরিফাই করার মাধ্যমে সিম প্রদান করতে হবে। যাতে অন্য কেউ ব্যাক্তি ফ্রড ভাবে অন্যের নামে সিম তুলতে না পারে। এর ফলে সিম কার্ড নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তবে আপনি একজন জেনুইন ব্যক্তি হলে আপনার কোন সমস্যাই হবে না, কারণ আপনার আধার কার্ডে আপনার বায়োমেট্রিকই তো ভেরিফাই রয়েছে।

এবং এই নতুন টেলিকম বিলেতে আরো বলা হয়, যদি কোন ব্যক্তি এই ফ্রড করার চেষ্টা করে তাহলে তার তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

ডুবলিকেট সিম কার্ড সংক্রান্ত (Sim card spoofing)

অনেক সময় আপনার মোবাইলে সিম কার্ড থাকা সত্ত্বেও ওই একই নাম্বারের ক্লোন সিম কার্ড কোন ফ্রড ব্যক্তি বার করে নেয়। এরপর ওই নাম্বারে পাঠানো OTP এর মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্ট কেউ খালি করে দেয়। আপনি বুঝতেও পারেন না কারণ আপনার মোবাইলে তো ওই নাম্বারের সিম কার্ডটি রয়েছে। যখন আপনার কাছে একদিন বা দুদিন নেটওয়ার্ক না আসে তখন আপনি বুঝতে পারেন, কিন্তু সেই সময় অনেক দেরি হয়ে যায়। বিভিন্ন টেলিকম কোম্পানিও এই বিষয়ে সকলকে সতর্ক করেছে, যখনই মোবাইলে টাওয়ার আসবেনা তখনই যেন পার্শ্ববর্তী টেলিকম অফিস বা কাস্টমার কেয়ারে যেন যোগাযোগ করা হয়।

তবে এই Sim card spoofing নিয়ে নতুন বিলে বলা হয়, এটি একটি ‘punishable crime’। যদি কোন ব্যক্তি এই অপরাধী করতে গিয়ে ধরা পড়ে তাহলে তাকে কঠিন থেকে কঠিন সাজা দেওয়া হবে।

টেলিকম কোম্পানি নিয়ন্ত্রক সংক্রান্ত

এতদিন পর্যন্ত ভারতে টেলিকম কোম্পানি সম্পর্কিত যে সমস্ত নিয়মকানুন ছিল বা প্রণয়ন করত সেগুলি সম্পূর্ণ টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া অর্থাৎ TRAI করতো। এবং টেলিকম কোম্পানিগুলি TRAI এর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ করতো সরকারের কাছে। কারণ যে কোন বিষয়ে পদক্ষেপ TRAI খুবই হালকা ভাবে নিতো।

তাই নতুন বিলে সরকার কিছু বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। দ্বিতীয়তঃ, এবার থেকে TRAI এর চেয়ারম্যান এবং মেম্বার পদে প্রাইভেট সেক্টর থেকেও ব্যক্তিদেরকে যুক্ত করা হবে । এতদিন পর্যন্ত যে সমস্ত সিভিল সার্ভেন্ট ব্যক্তিরা ছিল তাদেরকেই এই সমস্ত পদগুলিতে নিযুক্ত করা হতো। এবার থেকে যদি কোন প্রাইভেট সেক্টরের এ বিষয়ে দক্ষ বা অভিজ্ঞ ব্যক্তি থেকে থাকে তাদেরকেও এই পদগুলিতে নিযুক্ত করা হবে।

লাইসেন্স সমর্পণের নিয়ম সংক্রান্ত

আপনারা সকলেই জানেন, টেলিকম সেক্টরেতে নতুন কোম্পানি খুলতে গেলে অনেক টাকা ইনভেসমেন্ট করতে হয়। এমনকি এর জন্য বিভিন্ন লাইসেন্স তৈরি করতেও অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোম্পানি স্থাপন করার পর অনেক সময় কোম্পানিটি ভালোভাবে চলে না এবং লসের মুখে পড়ে থাকে। তখন কোম্পানির মালিক কোন পথ না পেয়ে কোম্পানিটিকে বন্ধ করে দেয়। এবং যে লাইসেন্সগুলো করেছিল সেগুলো কেউ সারেন্ডার করতে হয় সরকারের কাছে। এক্ষেত্রে ও কিছু টাকা ফাইন লেগে যায়। কিন্তু সরকার এই নতুন টেলিকম বিলেতে বলে, লাইসেন্স সেলেন্ডারিং করতে কোন ফাইন লাগবে না, এবং লাইসেন্স করার জন্য যে টাকা কোম্পানি fees হিসেবে দিয়েছিল সেটাও যতটা সম্ভব রিফান্ড করার চেষ্টা করবে। যাতে করে বাজারেতে আরো নতুন কোম্পানি এই টেলিকম সেক্টরেতে আসে।

প্রমোট করা মেসেজ সংক্রান্ত

আপনার কাছে যে টেলি কোম্পানিরই সিম থাকুক না কেন, লক্ষ্য করবেন প্রায় প্রমোশনাল এবং অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ম্যাসেজ আসতে থাকে। আপনিও হয়তো পেরেশান হয়ে যান, আমিও পেরেশান হয়। এই নতুন বিলে বলা হয়েছে, ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া এই ধরনের প্রমোশনাল বা অ্যাডভার্টাইজমেন্ট মেসেজ সেন্ড করতে পারবে না টেলিকম কোম্পানিগুলি।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের জন্য

এতদিন পর্যন্ত spectrum এর জন্য নিলামি হতো। অর্থাৎ ২g, ৩g, ৪g, ৫g বা অন্য কিছু লঞ্চের জন্য কোন কোম্পানিকে প্রথম অনুমতি প্রদান করা হবে। এখানে যে কোম্পানি যত বেশি টাকা প্রদান করত তাকে প্রথম অনুমতি দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে এই বিলে satellite internet এর ক্ষেত্রে অক্সেনিং উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সরকার এখানেতে fees স্থির করবে। অর্থাৎ এত টাকা যে প্রদান করবে তাকেই স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের অনুমতি দেওয়া হবে।

কোম্পানির জরিমানা সংক্রান্ত

টেলিকম সংক্রান্ত আগে যে বিল ছিল সেই অনুযায়ী যদি কোন টেলিকম কোম্পানি কোন রুলসকে ভঙ্গ করতো, তাহলে কোম্পানিগুলোকে প্রত্যেক সার্কেল অনুযায়ী 50 কোটি টাকা করে জরিমানা দিতে হতো। অর্থাৎ দিল্লি সার্কেলে কোন নিয়ম ভঙ্গ করলে সেখানে ৫০ কোটি টাকা, আবার কলকাতা সার্কেলে কোন নিয়ম ভঙ্গ করলে ৫০ কোটি টাকা, এইভাবে যদি কোম্পানি প্রত্যেক সার্কেলেই নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে প্রায় ১১০০ কোটি টাকার মতো জরিমানা প্রদান করতে হতো।

যার কারণে অনেক টেলিকম কোম্পানি ঋণবদ্ধ হয়ে পড়েছিল এবং কয়েকটা কোম্পানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই বিলের মাধ্যমে প্রত্যেক সার্কেলে নিয়ম ভাঙ্গার জন্য জরিমানা হিসেবে ৫০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

কোম্পানির অধিকার সংক্রান্ত

এই বিলেতে টেলিকম কোম্পানি গুলোকেও কিছু অধিকার দেওয়া হয়েছে টাওয়ার সংক্রান্ত। যেমন- কোন ব্যক্তির ছাদে টাওয়ার বসানো রয়েছে, যদি বাড়ি বা বিল্ডিংটি অন্য কাউকে বিক্রি করে দেয় এবং যে কিনেছে সে কোম্পানিকে জোর করে টাওয়ার হাটাতে বলতে পারবে না। অর্থাৎ এটি টেলিকম কোম্পানিগুলির সুবিধার জন্যই করা হয়েছে।

ম্যাসেজ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জননিরাপত্তার মতো বিষয়গুলির ক্ষেত্রে ফেক ম্যাসেজ এবং কনভারসেশনকে বন্ধ করার জন্য, রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার স্থান এবং সময়ের সাপেক্ষে টেলিকমিউনিকেশনকে নিজেদের আন্ডারে নিতে পারবে। তবে নিউজ চ্যানেল সম্পর্কিত খবরগুলিতে তেমন হস্তক্ষেপ করবে না। তবে কোন নিউজ চ্যানেল যদি ফেক নিউজ চালাই তাহলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং কোথাও হিংসা বা অন্যান্য কারণে সময় সাপেক্ষে ইন্টারনেট বন্ধ করার অধিকার শুধুমাত্র কেন্দ্র সরকারের থাকবে।

OTT app Related

অনেকেই হয়তো ভাবছেন OTT app গুলিকে এই টেলিকম বিলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু এমনটা করা হয়নি, তবে OTT apps গুলির মাধ্যমে যে ভিডিও বা অডিও কল করা হয় সেগুলি এই বিলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

অর্থাৎ নতুন টেলিকম বিলটিতে সাধারণ মানুষ অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের ওপরে ডাইরেক্টলি ভাবে তেমন কোনো প্রভাব না পড়লেও কিছুটা হলেও ইনডাইরেক্টলি ভাবে পড়তে পারে। তবে এই বিলটিতে কোম্পানির যেমন লাভ হবে তেমন ব্যবহারকারীদেরও কিছুটা ডাটা সেফটির বিষয়ে উপকার হবে। এ বিষয়ে আপনার কি মতামত কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন।

Conclusion

এই টেলিকমিনিকেশন বিলটি আগের টেলিকমিউনিকেশন বিলেরই একটি সংশোধিত রূপ। যেখানে টেলি যোগাযোগ সংস্থার ব্যবহার বিধির পাশাপাশি গ্রাহকদের প্রাইভেসির দিকেও লক্ষ্য রাখার কথা বলা হয়েছে।

FAQ

টেলিকমিউনিকেশন কি?

প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থাৎ টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ করার প্রক্রিয়া হল টেলিকমিউনিকেশন।

ভারতে প্রথম টেলিকমিউনিকেশন ব্যাবস্থা কত সালে শুরু হয়?

১৯৫০ সালে প্রথম টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু হয়।

ভারতের প্রথম টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা কোনটি?

“দি টেলিগ্রাফ” হল ভারতের প্রথম টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *