ইন্ডিয়ার রিজিওনাল নেভিগেশন সিস্টেম, যেটি মূলত GPS এর পরিপূরক। আমেরিকার GPS আমরা অনেক বছর ব্যবহার করেছি, কিন্তু এই জিপিএস সিস্টেম উপযুক্ত ভাবে ব্যবহার করার জন্য কিছু ক্ষেত্রে অনুমতি ছিল না। তাই প্রয়োজনের সময় ওই সমস্ত ক্ষেত্রে ভারত সরকার জিপিএস ব্যবহার করতে পারে না। তখন থেকেই ভারত সরকারের মধ্যে এই চিন্তা ভাবনার অনুভূতি হয়, যে ভারতের নিজস্ব একটি জিপিএস সিস্টেম থাকা প্রয়োজন।
বন্ধুরা আপনারা তো জানেন জিপিএস মূলত ব্যবহার করা হয়, সঠিক পথ সঠিক সময়কে জানার জন্য। তেমনি ইন্ডিয়া এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে সঠিক সময় ও সঠিক জায়গা জানার জন্য বা পৌঁছানোর জন্য এই NavIC সিস্টেম।
রিজিওনাল নেভিগেশন সিস্টেমের উপর কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী নেভিগেশন সিস্টেমের উপরে কাজ করার জন্য ISRO একটি প্রোগ্রাম লাঞ্চ করে, যেটির নাম ‘ইন্ডিয়ান রিজিওনাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম’ (IRNSS) । যার কাজ ছিল নেভিগেশন সংক্রান্ত স্যাটেলাইটকে লঞ্চ করা, এবং নেভিগেশন সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্য পরিচালনা করা। এবং নেভিগেশন সংক্রান্ত সফটওয়্যার তৈরি করে সেটিকে পরিচালনা করা।
ইসরোর দ্বারা তৈরি করা ন্যাভিগেশন সিস্টেমটির নাম হল ‘NavIC’ বা ‘Navigation with Indian Constellation’ । এই নামকরণের অনেক অর্থ রয়েছে যেমন Navik, selor, Navigator ইত্যাদি। সাধারণত নাবিক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা মানুষকে নিয়ে গিয়ে থাকে, তেমনি এই নেভিগেশন সিস্টেমেরও একই কাজ। মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া।
এখন এই ‘NavIC’ সিস্টেমকে যুক্ত করা হচ্ছে আধার এনরোলমেন্ট ডিভাইসের সঙ্গে। আধার এনরোলমেন্ট ডিভাইস বলতে, আপনারা যদি কোনদিন আধার কার্ড তৈরি করতে বা আধার কার্ডের কোন কারেকশন করতে আধার এনরোলমেন্ট অফিসে গিয়ে থাকেন, সেখানে চোখের রেটিনার স্ক্যানের জন্য, আঙুলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানের জন্য, মুখমণ্ডলের স্ক্যানের জন্য নানান ধরনের ডিভাইস দেখেছেন। ওগুলি একচুয়ালি আধার এনরোলমেন্ট ডিভাইস।
এই সমস্ত ডিভাইস গুলিতে আমাদের লোকেশনও যুক্ত হয়ে থাকে। যেমন কোন জায়গায় গিয়ে আধার কার্ড বানানো হয়েছে বা কোন জায়গায় গিয়ে আধার কার্ডের কারেকশন করানো হয়েছে, ইত্যাদি নানান তথ্য এই ডিভাইসের মধ্যে সংযুক্ত হয়ে থাকে। এর ফলে ভারতের মধ্যে নেভিগেশন সিস্টেমের মাধ্যমে যে কোন জায়গাটি ক্যাচ করা অনেক সুবিধা হবে এবং একিউরেট।
তবে ‘পার্লামেন্টারি কমিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি’ উল্লেখ করেছেন, আমরা এর উপরে কাজ করছি এবং খুব জলদি আধার এনরোলমেন্ট ডিভাইসকে NavIC এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে। যাতে করে ভারতকে নেভিগেশনের ব্যাপারে একটি আত্মনির্ভর দেশ তৈরি করা যায়, দ্বিতীয়তঃ নেভিগেশনের জন্য বাইরের দেশের উপরে যে নির্ভর করতে হয়, তা আর করতে হবে না।
বিশেষত এই কাজটি বর্তমানে ট্রায়াল ভার্সনে রয়েছে। এর সঙ্গে কোন কোন টেকনোলজি এবং কি কি ফিচার যুক্ত করা হবে সেই নিয়ে গবেষণা চলছে।
NavIC দুটি সার্ভিসের জন্য ব্যবহার করা যাবে, একটি হলো স্ট্যান্ডার্ড পজিশন সার্ভিস (SPS), যেটি আমাদের মত সাধারণ মানুষ ট্রাফিকের পরিস্থিতি, কোন স্থান এক্স্যাক্ট কোন জায়গায় রয়েছে, কোন জায়গা নিজস্ব বাড়ি থেকে কত দূরে রয়েছে ইত্যাদি পরিষেবা SPS এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে।
দ্বিতীয়টি হল রেস্ট্রিক্টেড সার্ভিস (RS), এই সার্ভিস শুধুমাত্র সেই সমস্ত রেজিস্টার্ড ইউজারদের জন্য, যারা বিশেষত মিলিটারি বা সিকিউরিটি এজেন্সি রয়েছে।
নেভিগেশন সিস্টেমের জন্য স্যাটেলাইট
NavIC এ প্রথমে ৭টি স্যাটেলাইট লঞ্চ করা ছিল, পরে আরও একটি লঞ্চ করা হয়েছে অর্থাৎ বর্তমানে এখন ৮টি স্যাটেলাইট রয়েছে। এগুলির মধ্যে ৩টি স্যাটেলাইট জিও স্টেশনারি অরবিট এর মধ্যে থেমে থাকে। আর বাকি ৫টা স্যাটেলাইট জিও সিনক্রোনেট আরবিটে ঘুরতে থাকে। NavIC সিস্টেমের জন্য Indian regional navigation system satellite বা IRNSS ভারত সহ ভারতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে প্রায় ১৫০০ কিমি পর্যন্ত অঞ্চলকে ক্যাপচা বা স্ক্যান করতে পারবে।
তবে আপনি হয়তো ভাবছেন আমেরিকার জিপিএস সিস্টেমে ২৪ টি স্যাটেলাইট সংযুক্ত রয়েছে, সেই জায়গায় ভারতের NavIC সিস্টেমে মাত্র ৮টি রয়েছে। বন্ধুরা আপনাদের জানকারীর উদ্দেশ্যে জানিয়ে দিই, ওটি পুরো গ্লোবালের জন্য অর্থাৎ পুরো বিশ্বের জন্য। কিন্তু NavIC সিস্টেমটি শুধুমাত্র ভারতের জন্য।
এবং দেশের সরকারও এর প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে, সরকার জানিয়েছে যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিভিন্ন মোবাইলেতে NavIC সিস্টেম ব্যবহার করা হবে। এর জন্য চিপসেটে যে সমস্ত পরিবর্তন করতে হবে সেগুলি চিপসেট কোম্পানিগুলিকে অবশ্যই করতে হবে। আগে যে সমস্ত ফাইভ-জি মোবাইল গুলো লঞ্চ হবে তাতে নাবিক সিস্টেম ব্যবহার করা হবে। এমনকি ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (NDMA) গুলি অনেক আগে থেকেই NavIC সিস্টেমকে ব্যবহার করেছে।
বিভিন্ন ধরনের ন্যাচারাল ডিজাস্টার রিপোর্ট প্রোভাইড করার জন্য। যেমন এক্সাক্টলি কোথায় ভূমিকম্প হয়েছে, কোথায় বন্যা হয়েছে, কোন এলাকায় সুনামি হয়েছে, কোনখানে ধস ঘটেছে, ঝড় হয়েছে বা কোনখানে সমুদ্রের উত্তাল হয়েছে, বা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন ব্যক্তি সমস্যায় পড়ে আছে কি না, তা জেনে উদ্ধার কার্যের জন্য, ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য প্রদান করার জন্য NavIC সিস্টেমকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তাছাড়া ATM এর মধ্যে কোন কোন সময় টাকা তুলছে বা জমা দিচ্ছে, ম্যাপিং ডাটাকে ক্যাপচা করার জন্য, ভেইকেল ট্রাকিং এর জন্য, যেমন কোন মাল ভর্তি ট্রাক সঠিক রাস্তায় যাচ্ছে কি না বা উপযুক্ত জায়গায় গিয়ে মাল ডেলিভারি করল কি না, সমুদ্রে কোন ঝড় বা উত্তাল হয়ে থাকলে ফিশারম্যানদেরকে আগে থেকেই সাবধানতা করে দেওয়া, যাতে তারা সমুদ্রের মাছ ধরতে না যায়।
বিশ্বের নেভিগেশন সিস্টেম সমূহ
বর্তমানে বিশ্বে চারটি গ্লোবাল নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে। আমেরিকার GPS, রাশিয়ার GLONASS, ইউরোপ ইউনিয়নের GALILEO, চায়নার BeiDou ।
এবং দুটি রিজিওনাল নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে, যা শুধুমাত্র নিজস্ব দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ভারতের NavIC, ও জাপানের QZSS . তবে আশা করা যায় ভারতের NavIC সিস্টেম ধীরে ধীরে গ্লোবালিও হতে পারে।
Conclusion
এই নিভিগেশন সিস্টেম মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই এগুলির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবহারও আমাদের অনেক প্রয়োজনে এসে থাকে। তাই আজ সাধারণ মানুষও তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে নেভিগেশন সিস্টেমগুলোকে ব্যবহার করছে।
FAQ
NavIC হলো একটি ভারতের নেভিগেশন সিস্টেম। যেটি যে কোন জায়গাকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এবং GPS এর মতো কাজ করে।
বিশ্বের সর্বমোট ছয়টি নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে। যার মধ্যে চারটি নেভিগেশন সিস্টেম বিশ্বব্যাপী কাজ করে।